বিবিসি ২০২৪ সালের বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণা জাগানো এবং প্রভাবশালী নারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে
তাদের মধ্যে রয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নাদিয়া মুরাদ, ধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়া এবং ক্যাম্পেইনার জিসেল পেলিকট, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, অলিম্পিয়ান রেবেকা আন্দ্রাদে ও অ্যালিসন ফেলিক্স, গায়িকা রে, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ট্রেসি এমেন, জলবায়ু ক্যাম্পেইনার আদেনিকে ওলাদোসু এবং লেখিকা ক্রিস্টিনা রিভেরা গার্যা।
গাজা, লেবানন, ইউক্রেন এবং সুদানের প্রাণঘাতী সংঘাত এবং মানবিক সংকট থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী রেকর্ড সংখ্যক নির্বাচন পরবর্তী সামাজিক বিভাজনের সাক্ষী হওয়া পর্যন্ত, নিত্যনতুন উপায়ে নারীদের দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হয়েছে।
বিবিসি ১০০ নারী উপরোক্ত পরিস্থিতির নারীদের উপরে সৃষ্টি হওয়া প্রভাবকে স্বীকৃতি দিয়ে এই বছর তাদের উদযাপন করছে যারা বদলে যাওয়া বিশ্বে তাদের দৃঢ়তার মাধ্যমে পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন।এছাড়া এই তালিকা জলবায়ু সংকটের প্রভাব পর্যবেক্ষণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, তাই জলবায়ু বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের উদযাপন করছে যারা তাদের সমাজকে এর প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করছেন।
নামগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্রম বা র্যাংকিং অনুযায়ী নয়
মানবাধিকার কর্মী
স্বেতলানা আনোখিনা রাশিয়ার উত্তর ককেশাস, পূর্ব ইউরোপ এবং এশিয়ায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের সাহায্য করতে বহু বছর ধরে কাজ করছেন।
২০২০ সালে তিনি 'মেরেম' প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি দাগেস্তান, চেচনিয়া এবং অন্যান্য উত্তর ককেশাস অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের নিরাপদে অন্যত্র স্থানান্তর করতে সাহায্য করেন, তাদের আইনগত এবং মানসিক সহায়তা প্রদান করেন।
আনোখিনা নিজে ২০২১ সালে রাশিয়া ছেড়ে চলে যান, যখন চেচেন ও দাগেস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী তার নারী আশ্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালিয়েছিল।
গত বছর, রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে একটি অপরাধ তদন্ত শুরু করেছিল।
শিক্ষা ও যোগাযোগ মাধ্যম উদ্যোক্তা
তালেবান যখন আফগান নারীদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করে, যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক উদ্যোক্তা হামিদা আমান তখন বেগম অ্যাকাডেমি নামক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শুরু করেন যেখানে স্কুলে যেতে না পারা নারীদের জন্য বিনামূল্যে মাল্টিমিডিয়া কোর্স শেখানো হয়।
গত বছরে এই প্ল্যাটফর্মটি সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য দারি ও পশতু ভাষায় সাড়ে আট হাজারের বেশি ভিডিও তৈরি করেছে।
হামিদা মার্চে বেগম অ্যাকাডেমির শিক্ষামূলক চ্যানেল বেগম টিভি চালু করেন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বেগম অ্যাকাডেমির কোর্স সম্প্রচার করা শুরু করেন।
এর আগে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর 'রেডিও বেগম' প্রজেক্ট চালু করেছিলেন হামিদা আমান। এই রেডিওটি নারীদের তৈরি ও বিশেষ করে নারীদের জন্য।
সাংবাদিক ও কবি
যখন গাজার যুদ্ধ শুরু হয় বাইশ বছর বয়সী প্লেসটিয়া আলাকাদ তখন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। যুদ্ধের প্রথম দিকে, তিনি তার অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি বিমান হামলার সময়কার একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং তার পরবর্তী গাজা আপডেট, কবিতা এবং ডায়েরি এন্ট্রির মাধ্যমে তিনি ইনস্টাগ্রামে ৪০ লাখ ফলোয়ার পান। তার এই প্রতিবেদনগুলোর ওপর ভিত্তি করে লেখা স্মৃতিকথা “আইজ অফ গাজা” শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।
আলাকাদ ২০২৪ সালের ‘ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড’ এর সেরা সাংবাদিক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের মতো উচ্চপর্যায়ের ফোরামে ফিলিস্তিনিদের জন্য সমর্থন জানিয়েছেন।
নভেম্বর ২০২৩-এ আলাকাদ গাজা ত্যাগ করেন। তিনি বৈরুতে গণমাধ্যম অধ্যয়নে মাস্টার্স করার জন্য একটি বৃত্তি পেয়েছেন।
ফটোসাংবাদিক
১৯৯০-এর দশকের লেবাননে গৃহযুদ্ধের পর অবিরাম অস্থিরতার মাঝে বেড়ে ওঠে ক্রিস্টিনা আসি। এটি তাকে সংঘাত নথিভুক্ত করতে এবং যুদ্ধের অজানা গল্প তুলে ধরতে অনুপ্রাণিত করে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি ইসরায়েলি হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। দক্ষিণ লেবাননে এই বিস্ফোরণে তার সহকর্মী ইসাম আবদাল্লাহ মারা যান, এবং আরও পাঁচজন সহকর্মী আহত হন। পরে আসির একটি পা কেটে ফেলতে হয়।
এই অভিজ্ঞতা তাকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার পক্ষে প্রচার করতে উদ্বুদ্ধ করে।
২০২৪ সালে প্যারিসে অলিম্পিক মশাল দৌড়ে অংশগ্রহণের সময় তিনি তার কাজ উৎসর্গ করেন সেই সব সাংবাদিকদের, যারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
বুননশিল্পী এবং ব্যবসায়ী
দুই বছর আগে, দিলোরম ইউলদোশেভা একটি ফসল কাটার সময় দুর্ঘটনায় তার দুটি পা হারান। তবে তা তার বড় স্বপ্ন দেখার ইচ্ছাকে দমাতে পারেনি।
তিনি নতুন দক্ষতা শেখার পাশাপাশি উজবেক তরুণীদের জীবিকা অর্জনে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি নিজস্ব সেলাই ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
উদ্যোক্তা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয় শিখে তিনি ৪০ জন শিক্ষানবিশকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কয়েক মাসের মধ্যেই বিনামূল্যে কর্মশালা পরিচালনা করে এবং শ্রমিক ও স্কুল শিশুদের ইউনিফর্ম তৈরির জন্য চুক্তি নিশ্চিত করে তার কোম্পানির বেশ উন্নতি হয়।
তার ব্যবসা এখন তার এবং আরও অনেক নারীর আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।
শিল্পী
১৯৯০-এর দশকে ট্রেসি এমেন মাই বেড এবং দ্য টেন্টের মতো সাহসী কাজের এর জন্য পরিচিতি পান, যেগুলো মানুষকে তাদের যৌন অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
তখন থেকেই শিল্প জগতে তিনি একটি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন, তার স্বীকারোক্তিমূলক এবং আত্মজীবনীর আদলে কাজের জন্য আলোচিত হয়েছেন।
মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় তোলা 'মাই বেড' লন্ডনে প্রদর্শনীর ২৫ বছর পার হয়েছে। একসময় ব্রিটিশ শিল্পকলার ভয়ঙ্কর চরিত্র হিসেবে চিত্রিত এমিনকে এবছর রাজা চার্লস ভিজ্যুয়াল আর্টে অবদানের জন্য 'ডেম' উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
তিনি যুক্তরাজ্যে 'মার্গেটে ট্রেসি এমিন ফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা নতুন প্রতিভা তৈরি করতে সহায়তা ভূমিকা রাখে
বর্তমান সময়ে একজন নারী হিসেবে আমি মনে করি আমাদের যতটা সম্ভব দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন... এখন এমন একটি সময় যখন আরও বেশি ঐক্য এবং নারীদের জন্য আরও বড় লড়াই প্রয়োজন।
ট্রেসি এমেন
ইহুদি পণ্ডিত
নিউ ইয়র্কের ইহুদি সম্প্রদায়ের একজন পথিকৃৎ, র্যাবাই শ্যারন ক্লাইনবাম তিন দশক ধরে এলজিবিটিকিউ+ অধিকার ও ধর্মের সংযোগস্থলে পরিবর্তন আনার প্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
১৯৯২ সালে প্রথম নারী র্যাবাই হিসেবে নিয়ো পান। তিনি এই সম্প্রদায়কে নানাউত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন - যার মধ্যে রয়েছে ১৯৯০-এর দশকের এইডস সংকট।
তিনি সম্প্রদায়ের সদস্যদের পরিধি বাড়িয়ে তাতে ট্রান্স এবং নন-বাইনারি ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এলজিবিটিকিউ+ সহনশীল সিনাগগ বলে মনে করা হয়।
এই বছর অবসর নেওয়া ক্লাইনবাম ছিলেন সামাজিক ন্যায়বিচার প্রকল্পগুলোর প্রধান চালিকাশক্তি এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম-এ নিয়োগ দিয়েছিলেন।
লেখক
ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা একজন বিখ্যাত এবং বহু পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক। ২০২৪ সালে তাঁর বই লিলিয়ানার ইনভিন্সিবল সামার এর জন্য স্মৃতিকথা বিভাগে পুলিৎজার পুরস্কার জেতেন। এই বইটি 'ফেমিসাইড' বা নারীনিধন বিষয়ে আলোকপাত করে।
গল্পটি তার বোন লিলিয়ানাকে নিয়ে, যাকে ১৯৯০-এর দশকে মেক্সিকোতে তার সাবেক প্রেমিক হত্যা করে। ওই ব্যক্তি পালিয়ে যায়, এবং তার বিচার হয়নি। রিভেরা গারজা বোন হারানোর যন্ত্রণা তুলে ধরেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেন, যেটি এমন একটি দেশে যেখানে নারীনিধনের হার পৃথিবীর অন্যতম বেশি।
তিনি ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টনে স্প্যানিশ ভাষায় সৃজনশীল লেখালেখির পিএইচডি প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা।
ভাষাকে ধারাবাহিকভাবে উল্টে-পাল্টে নারীদের গল্প বলতে পারা প্রয়োজন, যেন সেটি দৃঢ়তার ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।
ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা
নারী আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক
লিন্ডা ড্রোফন গুনার্সডটির আইসল্যান্ডের নারী আশ্রয়কেন্দ্রে পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের সাহায্য করেন।
আইসল্যান্ড সাধারণত বিশ্বের সেরা নারী বান্ধব দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও, দেশটিতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার হার এখনও অত্যন্ত উচ্চ।
আশ্রয়কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে, তিনি একটি নতুন জায়গা সৃষ্টির প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা হবে আইসল্যান্ডের প্রথম বিশেষভাবে নির্মিত মহিলা আশ্রয়কেন্দ্র।
গুনার্সডটির বলেন, ২০ বছর আগে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ৬৪% নারী আবার তাদের নির্যাতকদের কাছে ফিরে যেতেন, কিন্তু এখন উন্নত সহায়তা এবং পরিষেবার কারণে সেই সংখ্যা কমে ১১% এ নেমে এসেছে।
সমাজকর্মী
একটি কলম্বিয়ান কারাগার পরিদর্শন করার পর অভিনেত্রী জোহানা বাহামনের জীবন বদলে যায়। সেটা তাকে এমন মানুষদের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে যারা জীবনে "দ্বিতীয় সুযোগ" চেয়েছিল।
২০১২ সালে, তিনি অভিনয় ছেড়ে কারাগার সংস্কারের পক্ষে কাজ করতে শুরু করেন এবং ফান্ডাসিয়ন অ্যাকসিয়ন ইন্টার্না নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, যা কলোম্বিয়ার কারাগারের বন্দি এবং মুক্তিপ্রাপ্তদের সহযোগিতা করে।
প্রতিষ্ঠানটি কলম্বিয়াজুড়ে দেড় লাখের বেশি মানুষ এবং ১৩২টি আটক কেন্দ্রের কাছে পৌঁছেছে বলে জানা যায়।
২০২২ সালের 'সেকেন্ড অপরচুনিটিজ ল’ এর প্রবর্তক ছিলেন এ সমাজকর্মী, যা জোহানা বাহামন বিল নামে পরিচিত এবং যা কারাগার থেকে বের হওয়া ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণের প্রবেশাধিকারে আর্থিক প্রণোদনা প্রতিষ্ঠা করেছিল।
সহনশীল হওয়া, একটি সমস্যার পর উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেয়েও বেশি কিছু। এটি হচ্ছে সমস্যাকে ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
জোয়ানা বাহামন
চলচ্চিত্র নির্মাতা
পুরস্কার বিজয়ী ডকুমেন্টারি নির্মাতা শিন ডেইউকে তার লাগেজে একটি ড্রোনসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এবছর তাকে সামরিক শাসিত মিয়ানমারে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। একটি বন্ধ আদালতে, তাকে কোনও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়নি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ১৯৮৮ সাল থেকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন এবং আটক হওয়া তার জন্য নতুন না।
তিনি এক ডজনেরও বেশি ছোট ডকুমেন্টারি পরিচালনা করেছেন, যেগুলি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ২০০৭ সালের গণতন্ত্রের পক্ষে তার একটি প্রতিবাদী চলচ্চিত্র রয়েছে, যেখানে হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিল।
জাদুঘর পরিচালক
কিরগিজস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করেন ঝানিলসিনজাত তুরগানবায়েভা।
তিনি বিশকেকে একটি নৃতত্ত্ব জাদুঘর পরিচালনা করেন। সেখানে অনন্য জাতীয় প্রত্নসামগ্রীর প্রদর্শন করা হয় যা বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
তার দাতব্য কাজের একটি অংশ কিরগিজ সাহিত্যের সংরক্ষণ, যার মধ্যে রয়েছে 'এপিক অফ মানাস।' এটি কিরগিজ অঞ্চলের ৪০টি উপজাতিকে একত্রিত করার কথিত যোদ্ধার গল্প।
ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত এই মহাকাব্যের একটি সংস্করণ প্রায় ৫০০,০০০ লাইনের এবং এটি বিশ্বের দীর্ঘতম মহাকাব্যগুলোর একটি। তুরগানবায়েভার কাজ এই কিরগিজ ক্লাসিক পাঠ করেন তাদের জন্য সুযোগ ও কর্মসংস্থান তৈরি করে।
লেখক ও অনুবাদক
ইরানের অন্যতম প্রধান ঔপন্যাসিক, শাহরনুশ পারসিপুর তার লেখায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর যৌন নিপীড়ন ও বিদ্রোহ এমন নানা নিষিদ্ধ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি ইরানের জাতীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে কথাসাহিত্যের লেখক এবং প্রযোজক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তবে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের আগে দুজন কবিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। এর ফলে তিনি প্রথমবার কারাগারে যান।
বিপ্লবের পর, ইরানে তার কাজ ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং উইমেন উইদাউট মেন উপন্যাসে কুমারীত্ব নিয়ে খোলাখুলিভাবে উল্লেখ করার জন্য তাকে আবার কারাবন্দী করা হয়। এটি পরে ইরানের বাইরে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়।
পারসিপুর তার লেখায় কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এবং ১৯৯৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে আছেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক, গ্যালারি মালিক
৯৫তম জন্মদিনের কাছাকাছি এসে লেখক ও পরিচালক শুয়ান ফুং তার জীবনে বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
তিনি ভিয়েতনামের দুটি যুদ্ধ দেখেছেন এবং ১৬ বছর বয়সে দেশের স্বাধীনতার জন্য ফ্রান্সের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
ডাক্তার হিসেবে স্নাতক হওয়ার পর তিনি একটি ক্লিনিকের প্রধান, একজন যুদ্ধ সংবাদদাতা এবং ভিয়েতনাম টেলিভিশনের চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন, যেখানে তিনি সাইগনের পতনের মতো ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছেন।
৬২ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পরিবর্তে, তিনি ‘লোটাস গ্যালারি’ শুরু করেন। এটি হো চি মিন সিটির প্রথম বেসরকারি গ্যালারিগুলোর একটি - যা ভিয়েতনামের শিল্পকে বিশ্বে তুলে ধরতে চায়। তিনি স্থানীয় শিল্পীদের আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছেন।
নান
সিস্টার ইউজেনিয়া বোনেত্তি ১০০টিরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করেছেন এবং আফ্রিকার খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মানব পাচার এবং শোষণের শিকার অভিবাসী নারীদের সহায়তা করে।
তিনি রোমে যৌনকাজে বাধ্য করা নারীদের সাহায্য করতে বহু রাত পার করেছেন এবং ‘স্লেভস নো মোর’ সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন, যা মানব পাচার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায়।
তিনি ২৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে কেনিয়ায় মিশনারি হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যাতে তারা মানব পাচার প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে পারে।
অবসর গ্রহণের আগে, পোপ ফ্রান্সিস তাকে ২০১৯ সালের ‘ওয়ে অফ দ্য ক্রস’ লিখতে বলেন, যা ক্যাথলিকদের জন্য গুড ফ্রাইডে উপলক্ষে রোমের কলোসিয়ামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক অনুষ্ঠান।
ডিজাইনার
ফ্যাশন ডিজাইনার ইয়াসমিন মজাল্লির কাজ ফিলিস্তিনের জীবন ও ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বড় হওয়ার পর তিনি দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহতে চলে আসেন এবং ২০২০ সালে তার ব্র্যান্ড Nöl Collective চালু করেন।
তার ফ্যাশন লেবেলটি পারিবারিক সেলাই কর্মশালা, স্থানীয় মশলার দোকান (যারা প্রাকৃতিক রং সরবরাহ করে), এবং নারীদের সমবায়ের সঙ্গে কাজ করে। ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের মাধ্যমে তাঁতিরা এবং কারিগরেরা এই পোশাক তৈরি করেন, যা ফিলিস্তিনের বস্ত্র তৈরির ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
মজাল্লি তার পোশাকের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের গল্প বলেছেন এবং ‘নট ইওর হাবিবতি’ (তোমার বেবি নই) কথাটি ডেনিম জ্যাকেট ও টি-শার্টে তুলে ধরে বিশ্বের নারীদের বিরুদ্ধে হয়রানির ইস্যুও তুলে ধরেছেন।
সহ-প্রতিষ্ঠাতা, মনুমেন্টাল ওয়েলশ উইমেন
২০২১ সালের আগে, ওয়েলস-এ কোনও উল্লেখযোগ্য ওয়েলশ নারীর নামে উৎসর্গ করা মূর্তি ছিল না।
এর জবাবে আইনজীবী হেলেন মলিনিউ 'মনুমেন্টাল ওয়েলশ উইমেন' নামে একটি অলাভজনক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য ছিল জনপরিসরে ওয়েলশ নারীদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং তাদের অবদান ও অর্জন উদযাপন করা।
জনগণের প্রস্তাবিত নামের ভিত্তিতে, মলিনিউ এবং তার দল মোট পাঁচটি মূর্তি স্থাপনের পরিকল্পনা করেন, যাতে এই নারীদের গল্প হারিয়ে না যায়।
এখন পর্যন্ত তারা চারটি মূর্তি স্থাপন করেছেন। প্রথমটি কার্ডিফে ওয়েলসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষিকা বেটি ক্যাম্পবেলের, এরপর মাউন্টেন অ্যাশ-এ ইলেইন মর্গান, ল্যাংগ্রানগ-এ ক্রানোগউয়েন এবং নিউপোর্টে লেডি রন্ডার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী
একজন প্যানসেক্সুয়াল ব্যক্তি হিসেবে এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) নিয়ে বসবাস করার অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন রক্সি মারে। তিনি তার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন করেন এবং চিকিৎসা, দাতব্য ও কর্পোরেট খাতে বাদ দেয়ার প্রবণতাকে চ্যালেঞ্জ জানান।
ফ্যাশনের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে মারে মানুষকে হুইল চেয়ার বা ক্র্যাচের মতো চলাচলের উপযোগী উপকরণ স্টাইলের সাথে ব্যবহার করতে সহায়তা করেন। একই সাথে সংখ্যালঘু ও বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী থেকে আসা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দৃশ্যমান করতে কাজ করেন।
তিনি "দ্য সিক অ্যান্ড সিকেনিং" পডকাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, যেখানে প্রতিবন্ধকতা এবং অসুস্থতা নিয়ে খোলামেলাভাবে গল্প শেয়ার করা হয়। ব্যথা ব্যবস্থাপনা থেকে যৌন স্বাস্থ্য এবং শরীর ও যৌনতার ইতিবাচকতা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
ভিন্ন ধারার, শ্যামবর্ণ এবং প্রতিবন্ধী একজন নারী হিসেবে, দৃঢ়তা আমার কাছে ব্যক্তিগত, আবার একই সাথে সমষ্টিগত বিষয়। এটি সেই শক্তি যা প্রচলিত সিস্টেমগুলিকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষমতা দেয়, যা আমার মতো মানুষকে প্রান্তিক করে ফেলে।
রক্সি মারে
রোড ট্রিপার ও ইনফ্লুয়েন্সার
৫৬ বছর বয়সে অত্যাচারে আক্রান্ত বিয়ে থেকে মুক্তি পেতে সু মিন একটি গাড়ি, একটি তাঁবু নিয়ে নিজের পেনশনের টাকায় একাই চীন ভ্রমণে বের হন।
২০২০ সাল থেকে সেই ভ্রমণ তাকে ২০টিরও বেশি প্রদেশের ১০০টিরও বেশি শহরে নিয়ে গেছে।
তিনি তার পুরো যাত্রা নথিভুক্ত করেছেন এবং তার গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় তুলেছে। কারণ তিনি অন্য মধ্যবয়সী নারী, যাদের প্রায়ই 'আন্টি' বলে ডাকা হয়, তাদেরকে বিদ্যমান সামাজিক নিয়ম ভাঙার সাহস দেখিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন।
বর্তমানে, তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে ৬০ লাখ অনুসারী রয়েছে এবং তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র - লাইক আ রোলিং স্টোন - এই বছর মুক্তি পেয়েছে।
সাংবাদিক
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহী হিন্দা তার নিজের শহর সোমালিয়ার হারগেইসায় সহিংসতা থেকে পালানো লোকজনের গল্প ডায়েরিতে লিখতেন।
এখন তিনি বিলান-এর প্রধান সম্পাদক, যা সোমালিয়ার প্রথম এবং একমাত্র নারী সাংবাদিকদের দল।
এই দলটি কর্মক্ষেত্রে সোমালি নারীদের লিঙ্গবৈষম্য ও হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কাজ করে যেটি জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্বীকৃত একটি সমস্যা।
বিলানের লক্ষ্য হল সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের একটিতে সামাজিক সমস্যাগুলির উপর আলোকপাত করা। যেখানে এইচআইভিতে লুকিয়ে থাকা সোমালি, নির্যাতিত অনাথ এবং সম্প্রদায়ের দ্বারা ত্যাগ করা অ্যালবাইনোদের গল্প প্রকাশ করে৷
মেকআপ আর্টিস্ট
অ্যালোপেসিয়া ধরা পড়ার পর, ওলিভিয়া ম্যাক'ভে উইগ বা পরচুলার জগতে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন। নতুন স্টাইল আনার চেষ্টা করে এবং বিকল্প চুলের পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি চুল হারানো নারীদের উৎসাহ দেয়ার এবং ক্ষমতায়নের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন।
প্রায় পাঁচ লাখ ফলোয়ার রয়েছে তার। অ্যালোপেসিয়া এবং নারীর স্বাস্থ্যের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি উইগ পরাকে স্বাভাবিক করার কাজ করেন তিনি।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের এই মেকআপ আর্টিস্ট ও ইনফ্লুয়েন্সার কৈশোরেই তার চুল হারাতে শুরু করেন।
তিনি এখন উইগ নিয়ে কর্মশালা পরিচালনা করেন এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার যাত্রা ভাগ করে নেন, অ্যালোপেসিয়া নিয়ে থাকা নারীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করেন এবং এই অবস্থাটি নিয়ে আলাপচারিতাকে স্বাভাবিক করেন।
দৃঢ়তা সেই মুকুট যা আমরা নারীরা পরি। যে কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা মানিয়ে নিতে, রূপান্তরিত হতে এবং আমাদের পরিবেশে বিকাশ করতে শিখি।
ওলিভিয়া ম্যাক'ভে
ফ্যাশন উদ্যোক্তা
গ্রাফিক ডিজাইনার ইদানিয়া দেল রিও কিউবার প্রথম স্বাধীন ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্ল্যান্ডেস্টিনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই ব্র্যান্ড অনলাইনে বিশ্বব্যাপী পোশাক বিক্রি করে।
এই কোম্পানির জন্ম হয়েছিল প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর স্বাধীন ব্যবসা এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার পর।
হাভানাভিত্তিক নারীপ্রধান ডিজাইনার দলের তৈরি পণ্যগুলিতে কিউবার সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয় এবং এর মধ্য দিয়ে দ্বীপের সৃজনশীলতাকে সম্মান করার লক্ষ্য নেওয়া হয়। দেল রিও কোম্পানির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুনঃব্যবহৃত উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং টেকসই পদ্ধতির উপর জোর দেন।
হাভানার ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন (ISDI) থেকে স্নাতক দেল রিও ফ্যাশন ব্যবসা শুরুর আগে থিয়েটার, গ্যালারি এবং উৎসবের জন্য পোস্টার ডিজাইন করতেন।
স্থপতি
স্থাপত্যের গণতান্ত্রায়ণ' শীর্ষক কাজের জন্য লেসলি লোকো ২০২৪ সালে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস এর স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এটি এই ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরষ্কারগুলোর একটি। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে এই পুরষ্কার পেলেন।
তিনি গত দুই দশক ধরে শিল্পে যাদের প্রতিনিধিত্ব কম রয়েছে এমন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।
ঘানার স্কটিশ এশিক্ষাবিদ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত প্রথম মহিলা হিসেবে ভেনিস বিয়েনাল দ্য আর্কিটেকচারের কিউরেটর হয়েছিলেন, যেখানে তিনি ডেকার্বনাইজেশন এবং ডিকলোনাইজেশনের থিমগুলিতে মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আক্রায় আফ্রিকান ফিউচার ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। স্থাপত্য, জাতিসত্ত্বা ও আত্মপরিচয়ের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে কাজ করে এই প্রতিষ্ঠান।
দীর্ঘ মেয়াদে লক্ষ্যে অটুট থাকার সক্ষমতাই অধ্যাবসায়।
লেসলি লোকো
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনকারী
গত তিন বছর ধরে, পুজা শর্মা দিল্লিতে অজ্ঞাত মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে আসছেন।
তার এই কাজের অনুপ্রেরণা এসেছে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। তিনি প্রথমবার তাঁর ভাইয়ের শেষকৃত্য করেন, যখন কেউ এগিয়ে এসে সাহায্য করেনি।
পুজা শর্মা পুরোহিত এবং সম্প্রদায়ের বাধার সম্মুখীন হন, কারণ হিন্দু ধর্মে এই ভূমিকা ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষদের জন্য নির্ধারিত।
তবে, এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তিনি চার হাজারেরও বেশি মানুষের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন। এই মৃতদেহগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কাজ শেয়ার করেন এবং এটি প্রচার করেন যে প্রত্যেকেরই মৃত্যুর পর মর্যাদা পাওয়া উচিত।
কবি
লেখক এবং সাংবাদিক মারিয়া তেরেসা হর্টা পর্তুগালের অন্যতম প্রধান নারীবাদী এবং বহু পুরস্কারপ্রাপ্ত বইয়ের লেখক, তবে তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত 'নোভাস কার্টাস পর্তুগুয়েসাস' (নিউ পর্তুগিজ লেটারস)-এর সহলেখক হিসেবে।
তার গল্প, কবিতা এবং ইরোটিকার এই সংকলন ১৯৭২ সালে পর্তুগালের স্বৈরাচারী সরকার দ্রুত নিষিদ্ধ করে। হর্টা এবং তার সহলেখকদের "অশ্লীলতা" এবং "গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার" এর জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।
তাদের কেস "থ্রি মারিয়াস" নামে পরিচিত হয়ে ওঠে, যা শিরোনাম তৈরি করে এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের সূচনা করে।
১৯৭৪ সালের কার্নেশন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সে সরকারকে উৎখাত করার পর তাদের বিচার শেষ হয়। এই বছর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ৫০তম বার্ষিকী।
সুপ কিচেন প্রতিষ্ঠাতা
মাত্র ১৫ জনের জন্য একটি সুপ কিচেন শুরু করে, এখন দিনে ৫,০০০ জনের বেশি মানুষকে খাওয়াচ্ছেন মার্গারিটা ব্যারিয়েন্টোস। আর্জেন্টিনায় ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি পরিচিত, যেখানে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ জনসংখ্যার ৫৩% এখন দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে।
দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলের একটি এলাকায় জন্ম নেওয়া ব্যারিয়েন্টোস ছোটবেলা থেকেই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। তিনি ১৯৯৬ সালে লস পাইলটোনস নামের একটি সুপ কিচেন প্রতিষ্ঠা করেন, যা এখন একটি ফাউন্ডেশনে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে একটি ডে কেয়ার সেন্টার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেলাই কর্মশালা এবং একটি লাইব্রেরি পরিচালনা করে।
তার কমিউনিটি সেবার কাজ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সেলিব্রিটিদের সমর্থন পেয়েছে। ফুটবলার লিওনেল মেসি সম্প্রতি তাকে একটি সাইন করা শার্ট দিয়েছেন নিলামের জন্য।
ধর্মীয় আন্দোলনকারী
আনাত হফম্যান কয়েক দশক ধরে ইহুদি ধর্মের মধ্যে লিঙ্গ সমতা ও ধর্মীয় বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি 'উইমেন অফ দ্য ওয়াল' নামক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যা জেরুসালেমের পুরনো শহরের ওয়েস্টার্ন ওয়ালে ইহুদি নারীদের জন্য সমান প্রার্থনার অধিকার চায়।
বছরের পর বছর ধরে, তিনি নারীকে প্রার্থনার চাদর পরা এবং সম্মিলিতভাবে তোরা (ধর্মগ্রন্থ) পড়তে নিষিদ্ধ করে এমন নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
হফম্যান ২০ বছর ধরে ইসরায়েল রিলিজিয়াস অ্যাকশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন, যা রিফর্ম মুভমেন্টের একটি আইনগত ও অ্যাডভোকেসি বিভাগ এবং সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারে কাজ করে।
ফটোগ্রাফার
ইথিওপিয়ার ফটোগ্রাফার মাহেদার হাইলেসেলাসি শুকিয়ে যাওয়া নদী এবং ধ্বংস হওয়া শস্যক্ষেত্র নিয়ে কাজ করেন। তিনি তুলে ধরেছেন কীভাবে মারাত্মক খরা পরিবারগুলোকে তাদের কন্যাশিশুদের বাল্যবিবাহে বাধ্য করছে। এই কাজের জন্য তিনি ২০২৩ সালে কনটেম্পোরারি আফ্রিকান ফটোগ্রাফি পুরস্কার জিতেছেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, জলবায়ু সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা মেয়েদের সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পাবে।
হাইলেসেলাসির আলোকচিত্রে মানুষের ইতিহাস এবং দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার বিষয় উঠে আসে।
তার কাজ বহু মর্যাদাপূর্ণ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০২৪ সালের আফ্রিকান বিয়েনালে অফ ফটোগ্রাফি।
ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রকৌশলী
ইয়েমেনে বছরের পর বছর যুদ্ধের পর অনেক ঐতিহাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, প্রকৌশলী হারবিয়া আল হিমিয়ারি এগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার মিশনে নেমেছেন।
জাতিসংঘের সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে অংশীদার হয়ে, তিনি পুরানো সানার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের কয়েক ডজন আবাসিক এবং ঐতিহ্যবাহী ভবন পুনর্নির্মাণ করেছেন। ইউনেস্কোর ১৬ হাজারেরও বেশি সাইটে ক্ষয়ক্ষতির জরিপ করেছে।
ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তার কাজ কেবল ঐতিহাসিক সাইটগুলোকেই রক্ষা করেনি বরং অনেকের জীবনমানও উন্নত করেছে।
আল হিমিয়ারি স্থানীয় বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী নির্মাণশৈলীতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং তরুণীদের এই শিল্পে প্রবেশের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।
তীরন্দাজ
২০১৯ সালে তার প্রাক্তন প্রেমিকের আক্রমণে ট্রেসি অটো বুক থেকে নিচের অংশ অবশ হয়ে যায় এবং তার বাম চোখ হারান। একসময় উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফিটনেস মডেল অটো পুনরায় সক্রিয় জীবনযাপনে ফিরে আসার সংকল্প নেন।
মার্চ ২০২১ সালে, অটো একটি নতুন খেলা, আর্চারি শুরু করেন, যা আগে কখনও চেষ্টা করেননি। তার প্রথম তীরটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছিল। এরপর তিনি এ খেলায় মগ্ন হয়ে যান।
এ বছর, প্যারিসে তার প্রথম প্যারালিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করেন। তার অক্ষমতার কারণে, তিনি মুখ ব্যবহার করে তীর ছোঁড়েন।
প্রায় পাঁচ বছর পরে, তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে পারিবারিক সহিংসতার শিকারদের পক্ষে আডভোকেসি করছেন।
জিমন্যাস্ট
জিমন্যাস্ট হেবেকা আন্দ্রাজি তার মোট ছয়টি পদক জয়ের মাধ্যমে ব্রাজিলের সবচেয়ে সফল অলিম্পিয়ান হয়েছেন (তার রয়েছে নয়টি বিশ্ব শিরোপাও)।
তিনি ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ফ্লোর এক্সারসাইজে স্বর্ণপদক জিতেছেন, যেখানে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলসকে পরাজিত করেন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে, বাইলস এবং তার মার্কিন সহকর্মী জর্ডান চাইলস ব্রাজিলিয়ানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাথা নত করেন, যা ভাইরাল হয়ে এবারের অলিম্পিকের একটি প্রতীক হয়ে ওঠে।
দশ বছর বয়স পর্যন্ত আন্দ্রাজি সাও পাওলোর বাইরে যে ঘিঞ্জি এলাকায় বাস করতেন সেখান থেকে হেঁটে প্রশিক্ষণে যেতেন। আট ভাইবোনের মধ্যে একজন আন্দ্রাজির সিঙ্গেল মা অন্যের বাড়ি পরিষ্কার করে তার প্রশিক্ষণের খরচ চালাতেন।
বহু গুরুতর আঘাত পার করে তার উত্থান হয়েছে। এবং তিনি মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।
অলিম্পিক শ্যুটার
ক্রীড়ায় অর্জন এবং নিজস্ব কারিশমা দিয়ে কিম ইয়েজি এ বছর বিশ্বের নজরে এসেছে।
জুলাইয়ে তার প্রথম অলিম্পিকে মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল শ্যুটিং-এ রৌপ্যপদক জিতেছিলেন। এর কয়েক মাস আগেই তিনি মহিলাদের ২৫ মিটার পিস্তল শুটিং-এ বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন।
তার দক্ষতা, স্থির মনোভাব এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আদলের লুক - যা লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করার জন্য বিশেষ চশমা নিয়ে তৈরি - এসব মিলে তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
কিম ইয়েজি মাতৃত্বের সাথে সম্পর্কিত দায়িত্ব সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি তার ছয় বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য খেলা থেকে বিরতি নিচ্ছেন।
ক্রীড়ার মাধ্যমে আমরা সহনশীলতা, দলগত কাজ এবং দৃঢ়তা প্রদর্শন করি - যা, আমার মতে, মাঠের বাইরেও বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তনে অনুপ্রেরণা জোগায়।
কিম ইয়েজি
আফ্রো-পপ সঙ্গীতশিল্পী
নোয়েলা উইয়ালা এনওয়াদেই, তার মঞ্চের নাম উইয়ালা নামে পরিচিত, যার অর্থ তার স্থানীয় সিসালা ভাষায় ‘কর্মপরায়ণ’।
তার অনন্য ফ্যাশন এবং স্টাইলের জন্য তিনি পরিচিত। তার স্টেজ পোশাক এবং আনুষঙ্গিক জিনিসগুলো নিজেই ডিজাইন করেন, যা তার নিজ শহর উত্তর ঘানার ঐতিহ্য প্রদর্শন করে।
তার গানগুলোর অনেকটাই আফ্রিকান নারীদের শোষণ নিয়ে আলোকপাত করে। উইয়ালা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে এবং ঘানার প্রশাসনের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
কর্মসংস্থান এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করতে তিনি নিজ শহর ফুনসিতে একটি আর্টস সেন্টার, একটি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন এবং একটি রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
কমেডিয়ান
জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার, নাওমি ওয়াতানাবে নারীদের জন্য কমেডি জগতে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করেছেন।
তিনি পুরুষ-প্রধান জাপানি কমেডিতে নারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছেন, একজন নারী প্রধান চরিত্রে সামনে আসেন এবং জনপ্রিয় স্কেচ শো তৈরি করেছেন।
ওয়াতানাবে জাপানে শরীর সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতেও সাহায্য করছে, তিনি "পোচাকাওয়াই" নামে একটি দেহ নিয়ে ইতিবাচক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার অর্থ "মোটা এবং সুন্দর"। তিনি জাপানে প্লাস-সাইজের পোশাকের প্রথম ব্র্যান্ড চালু করেন।
জাপানি টিভি এবং চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জনের পর, তিনি এখন বিশ্বব্যাপী কমেডি মঞ্চে প্রবেশ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।
দৃঢ় থাকার উপায়? আমি সবসময় ভাবি, 'তুমি আমাকে পছন্দ করো না, ঠিক আছে। আমাকে এক বছর সময় দাও, হয়তো আমি তোমার মত বদলাতে পারব।' এটা আমার সবসময়ের মনোভাব।
নাওমি ওয়াতানাবে
সংগীতশিল্পী ও গীতিকার
পাকিস্তানের সঙ্গীত জগতের অন্যতম আইকন হাদিকা কিয়ানি তার কণ্ঠ এবং মানবিক কাজে অবদানের জন্য পরিচিত।
নব্বইয়ের দশকে খ্যাতি অর্জনকারী কিয়ানি দক্ষিণ এশিয়ার নারী পপ সঙ্গীত জগতে একটি সুপরিচিত শক্তি হয়ে ওঠেন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করেন।
পাকিস্তানের ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর, তিনি 'ভাসিলা-এ-রাহ' প্রকল্প চালু করেন, যা বেলুচিস্তান এবং দক্ষিণ পাঞ্জাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য নিবেদিত।
তিনি জনসাধারণকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলিকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানান এবং গত বছর প্রকল্পটি ঘোষণা করে যে তারা ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ৩৭০টি বাড়ি এবং অন্যান্য সুবিধা নির্মাণ করেছে।
হেভি মেটাল ব্যান্ড সংগীতশিল্পী
লিঙ্গ এবং ধর্মীয় নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করা ফিরদা মারসিয়া কুরনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। তিনি একটি হিজাব পরা নারীদের হেভি মেটাল ব্যান্ড ভয়েস অফ বাচেপ্রত-এর প্রধান গায়িকা এবং গিটারবাদক।
ইন্দোনেশিয়ার বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলির মধ্যে ইংরেজি এবং সুন্দানিজে গানের মাধ্যমে তারা পুরুষতন্ত্রের প্রতি তাদের হতাশা প্রকাশ করেন।
অনেকেই, বিশেষত রক্ষণশীল মুসলিমরা তা ভালোভাবে নেয়নি এবং এই ব্যান্ডের হেভি মেটাল গানে আপত্তি জানিয়েছে।
কিন্তু পশ্চিম জাভার গারুতে তাদের গ্রামের স্কুলে ১০ বছর আগে শুরু করা ব্যান্ডটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই বছর তারা সঙ্গীত উৎসবের ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ইন্দোনেশিয়ান ব্যান্ড হিসেবে গ্লাস্টনবারিতে পারফর্ম করেছে।
তায়কোয়ান্দো প্যারালিম্পিয়ান
২০২৪ সালের প্যারিস গেমসে প্যারালিম্পিক শরণার্থী দলের প্রথম সদস্য হিসেবে পদক জিতে ইতিহাস গড়েছেন জাকিয়া খুদাদাদি।
এক হাতে কনুই থেকে নিচের অংশ ছাড়াই জন্ম নেয়া এই অ্যাথলেট পশ্চিম আফগানিস্তানের হারাতে তার নিজ শহরে একটি গোপন জিমে ১১ বছর বয়সে তায়কোয়ান্দো চর্চা শুরু করেন।
২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর তাকে টোকিওতে তার প্রথম প্যারালিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
কিন্তু আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক কমিটি এবং ফ্রান্সের সহায়তায়, তাকে আফগানিস্তান থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয় এবং তিনি তালেবান শাসনের পর প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নেওয়া আফগান নারী ক্রীড়াবিদ হন।
আমার অলিম্পিক পদকের যাত্রা আফগান নারীদের, শরণার্থী নারীদের, প্রতিটি নারীর শক্তির কথা বলে। হাল না ছেড়ে, আমরা দেখিয়ে চলেছি যে কোনো নারী যা করতে চায় তা অসম্ভব নয়।
জাকিয়া খুদাদাদি
টেবিল টেনিস খেলোয়াড়
চীনা-চিলির টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ঝিয়াং জেং - বা তানিয়া - ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ৫৮ বছর বয়সে অভিষেক করেন।
ছোটবেলায় তার মা তার কোচ ছিলেন, এবং মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি চীনের জাতীয় টিমে সুযোগ পান, কিন্তু পরে চিলিতে চলে যান এবং ৩০ বছরের জন্য খেলাধুলা ছেড়ে ব্যবসায় মনোযোগ দেন।
কোভিড-১৯ মহামারী তাকে আবার টেবিল টেনিসে ফিরিয়ে আনে।
২০২৩ সালে, তিনি চিলির সেরা মহিলা খেলোয়াড় হন এবং দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ ও প্যান আমেরিকান গেমসে চিলির প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০২৪ সালের অলিম্পিকে খেলে তিনি তার "আজীবনের স্বপ্ন" পূরণ করেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক
অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক ক্লোয়ি ঝাও প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী এবং ইতিহাসের মাত্র তিনজন নারীর একজন - যিনি একাডেমির সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন৷
বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করে তিনি প্রথমে যুক্তরাজ্য এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তিনি নিজেকে "যাযাবর" হিসেবে বর্ণনা করেন। তার পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নোম্যাডল্যান্ড (২০২০) এই থিমের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
তার প্রথম দিককার চলচ্চিত্রে আদিবাসী সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করা থেকে শুরু করে মার্ভেল ইউনিভার্সের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় কাস্ট পরিচালনা পর্যন্ত, তিনি মানবিক বিষয়ে সংযোগের ব্যাপারে গভীরভাবে অনুভব করেন।
এই বছর তিনি ম্যাগি ও'ফ্যারেলের শেক্সপিয়ার-যুগের উপন্যাস হ্যামনেটের রূপান্তরে চলচ্চিত্র পরিচালনা করছেন, যা ২০২৫ সালে মুক্তি পাবে।
আমরা যেখানে কাজ করছি সে শিল্পের কাঠামো যদি না বদলাই, তাহলে আমরা কেবল বলছি আমাদের পুরুষদের মতো হতে হবে। কিন্তু আমি মনে করি না আমাদের শক্তি সেখানেই সীমাবদ্ধ।
ক্লোয়ি ঝাও
টক-শো হোস্ট এবং মডেল
অ্যাসিউম দ্যাট আই ক্যান' অর্থাৎ ধরুন আমি পারি, এমন প্রচারে ম্যাডিসন টেভলিনের ভাইরাল ভিডিও এই বছর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে, যা ডাউন সিনড্রোম নিয়ে মানুষদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
এই সচেতনতার প্রচারণা ১৫ কোটির বেশি ভিউ অর্জন করেছে এবং ইতিবাচক ভূমিকার জন্য পুরস্কার জিতেছে, যার মধ্যে রয়েছে কান লায়ন্স ফেস্টিভালের মর্যাদাপূর্ণ গোল্ড লায়ন।
অভিনেত্রী এবং মডেল টেভলিন নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে অংশগ্রহণ করেছেন, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন এবং কুইন্সি জোনস এক্সসেপশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
তিনি পুরস্কারের জন্য মনোনীত টক-শো 'হু ডু ইউ থিঙ্ক আই অ্যাম?' এবং ২১ কোয়েশ্চন্স পডকাস্ট হোস্ট করেছেন।
দৃঢ়তা মানে কখনও হাল না ছাড়া, এমনকি যখন আমাকে বিচার করা হয়, উপেক্ষা করা হয় বা অবমূল্যায়ন করা হয়... এটা আমি যা বিশ্বাস করি তা রক্ষার জন্য দাঁড়ানো এবং কখনও নিজেকে বা আমার সম্প্রদায়কে ছেড়ে না দেওয়া।
ম্যাডিসন টেভলিন
অ্যাথলেট
রেকর্ড ২০টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক এবং ১১টি অলিম্পিক পদক সহ, অ্যালিসন ফেলিক্স ট্র্যাক এবং ফিল্ডে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পদকপ্রাপ্ত অ্যাথলেট।
প্রসবজনিত জটিলতা প্রি-এক্লাম্পসিয়া হওয়া এবং অকালে কন্যা জন্ম দেওয়ার পর তিনি মাতৃস্বাস্থ্যের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। এখন তিনি মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিতে ২০ মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবার প্রচারে তিনি ভূমিকা রাখছেন।
অবসর নেয়া এ ক্রীড়াবিদ প্যারিস ২০২৪ গেমসে প্রথম অলিম্পিক ভিলেজ নার্সারির উদ্বোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এছাড়াও এই বছর, তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির অ্যাথলেটস কমিশনে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হন এবং শুধুমাত্র নারীদের খেলাধুলার উপর জোর দিয়ে করে তার নিজস্ব ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা সংস্থা চালু করেন।
দৃঢ়তা মানে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে শক্তি এবং সৌন্দর্য খুঁজে বের করা। প্রতিটি বাধাকে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা।
অ্যালিসন ফেলিক্স
কুস্তিগীর
তিনবারের অলিম্পিয়ান, বিনেশ ফোগাট ভারতের সবচেয়ে সফল কুস্তিগীরদের একজন। তিনি ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের প্রতি লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, কমনওয়েলথ এবং এশিয়ান গেমসে পদক জিতেছেন।
এই বছর তিনি ভারতের প্রথম নারী কুস্তিগীর হিসেবে অলিম্পিক ফাইনালে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু ওজন মাপার সময় ব্যর্থ হওয়ায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। পরে তিনি খেলাধুলা থেকে অবসর নেন এবং রাজনীতিতে যোগ দেন।
জেন্ডার স্টেরিওটাইপ সম্পর্কে স্পষ্টভাষী, ফোগাট ভারতীয় কুস্তিগীরদের দ্বারা ফেডারেশন প্রধান, ব্রিজ ভূষণ সিং-এর বিরুদ্ধে এক মাসব্যাপী প্রতিবাদের মুখ ছিলেন। সিং ক্রীড়াবিদদের যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন – যে অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছিলেন।
বিক্ষোভের সময় পুলিশ ফোগাট এবং অন্যদের আটক করলে প্রতিবাদটি শিরোনামে আসে।
কর্মক্ষেত্রে একটি খারাপ দিনের পরে নিজেকে টেনে নেওয়া এবং নিজেকে শক্তভাবে তুলে ধরার ক্ষমতাই হচ্ছে দৃঢ়তা
বিনেশ ফোগাট
দূরপাল্লার দৌড়বিদ
দীর্ঘ-দূরত্বের দৌড়ে সাফল্যের জন্য প্রশংসিত, কেনিয়ায় জন্মগ্রহণকারী রোমানিয়ান অলিম্পিয়ান জোয়ান চেলিমো এই বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের হাফ ম্যারাথনে রৌপ্য পদক জিতেছেন।
খেলার বাইরেও, তিনি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার এবং নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি খেলোয়াড়রা সেসব হুমকির মুখে পড়েন তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চান।
তিনি 'টিরোপ’স এনজেলস'-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা কেনিয়ার অ্যাথলেটদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি ২০২১ সালে তার দৌড়বিদ এবং বিশ্ব রেকর্ডধারক অ্যাগনেস টিরোপের হত্যার পরে গঠিত হয়। এটি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এই বছর অলিম্পিক রানার রেবেকা চেপটেগেইকে তার প্রাক্তন সঙ্গী দ্বারা হত্যার ঘটনা কেনিয়ায় নারীনিধনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নতুন করে আহ্বান জানিয়েছে
আমি বিশ্বাস করি যে প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হয় যখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে আমাদের কষ্ট আমাদের গল্পের শেষ নয়, বরং এটি আরও বড় কিছুর সূচনা।
জোয়ান চেলিমো মেলি
শিল্পী এবং জলবায়ু কর্মী
জলবায়ু বিষয়ক আইনজীবী, সঙ্গীতশিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ইনা মোজা নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতি প্রতিরোধ থেকে টেকসই উন্নয়ন প্রচারের কাজ পর্যন্ত বহু ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন।
তিনি 'দ্য গ্রেট গ্রিন ওয়াল' ডকুমেন্টারিতে প্রযোজনা ও অভিনয় করেছেন। এই ডকুমেন্টারিটি আফ্রিকার মরুভূমি বেড়ে যাওয়া রোধ এবং সাহেল অঞ্চলের নষ্ট হতে থাকা ভূমি পুনরুদ্ধারের উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টা তুলে ধরে। সাহেল ১২টি দেশজুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে অবস্থিত।
জাতিসংঘের কনভেনশন টু কমব্যাট ডেজার্টিফিকেশন-এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মোজা জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরেন।
তিনি কোড গ্রিন নামে একটি অলাভজনক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং গেমিংয়ের সমন্বয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপকে অনুপ্রাণিত করে।
মিউজিশিয়ান
লাতিন সঙ্গীত জগতে খ্যাতিমান গায়ক-গীতিকার গ্যাবি মোরেনো ২০২৪ সালে সেরা লাতিন পপ অ্যালবামের জন্য গ্র্যামি জিতে মূলধারায় প্রবেশ করেন।
দুই ভাষায় রচিত তার সঙ্গীতে প্রভাব রয়েছে আমেরিকানা, সোল এবং লাতিন লোকসংগীতের। আবেগময় কণ্ঠ দিয়ে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন তিনি।
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে ইউনিসেফের প্রথম গুয়াতেমালান শুভেচ্ছা দূত মনোনীত হয়েছেন তিনি।
তিনি সম্প্রতি একটি প্রচারণা শুরু করেছেন, যার লক্ষ্য মানসম্মত শিক্ষামূলক সরঞ্জামের সরবরাহ বাড়ানো, যেখানে তার দেশে প্রায় ২৭ লাখ ছেলে-মেয়ে স্কুল ব্যবস্থা থেকে বাইরে রয়েছে।
সংগীত শিল্পী
গায়ক-গীতিকার রে এই বছরের ব্রিট অ্যাওয়ার্ডসে ইতিহাস তৈরি করেছেন। তিনি মনোনীত সাতটি পুরস্কারের মধ্যে ছয়টি জিতেছেন এবং প্রথম নারী হিসেবে সংরাইটার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার জিতেছেন।
২০২১ সালে, রে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন যে তিনি নিজের অ্যালবাম প্রকাশের জন্য তার রেকর্ড লেবেল পলিডোরের সঙ্গে সাত বছর ধরে লড়াই করেছেন।
তিনি ২০২৩ সালে একজন স্বাধীন শিল্পী হিসেবে তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম 'মাই টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ব্লুজ' উপস্থাপন করেন যেটি বেশ সাফল্য অর্জন করে।
তিনি সংগীত শিল্পে এবং এর বাইরে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন - যেমন যৌন নিপীড়ন, মাদকাসক্তি এবং শরীরের বিকৃতি - সেসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এবং গীতিকারদের জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক দাবি করেছেন।
গায়িকা এবং সুরকার
যখন আফগানিস্তানে নারীদের কণ্ঠস্বর জনজীবন থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে, তখন গায়িকা ইলাহা সরুর এই দমনকে প্রতিহত করতে এবং উৎসাহের বার্তা পৌঁছে দিতে গান "নান, কার, আজাদি!" (রুটি, কাজ, স্বাধীনতা!) রচনা করেছেন।
এই গানটি অক্টোবরে আলবেনিয়ায় অনুষ্ঠিত অভূতপূর্ব অল-আফগান নারী সম্মেলনে প্রথম পরিবেশিত হয়।
চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং সঙ্গীতের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে, পুরস্কার বিজয়ী এই শিল্পী প্রায়ই নারীদের অধিকারের পক্ষে তার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছেন।
সরুর, যিনি হাজারা জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে এসেছেন, ২০০৯ সালে জনপ্রিয় প্রতিভা প্রদর্শনী আফগান স্টার-এ আবিষ্কৃত হন। তবে সঙ্গীত ক্যারিয়ার চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সহিংস প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন এবং ২০১০ সালে দেশ ত্যাগ করেন।
অভিনেত্রী
আরব সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নাম হেন্ড সাবরি। তার প্রথম পরিচিতি আসে নারীবাদী চলচ্চিত্র দ্য সাইলেন্সেস অফ দ্য প্যালেস (১৯৯৪)-এর মাধ্যমে, যা তিউনিসিয়ার নারীদের যৌন এবং সামাজিক শোষণকে তুলে ধরে।
২০১৯ সালে তিনি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথম আরব নারী বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সম্প্রতি তিনি ওলফা'স ডটারস ছবিতে অভিনয় করেছেন, যা ২০২৪ সালের অস্কারের জন্য তিউনিসিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে এবং সেরা ডকুমেন্টারি ফিচার বিভাগে মনোনীত হয়।
নভেম্বরে, গাজায় যুদ্ধের সময় খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রতিবাদে তিনি জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তার পদ থেকে ইস্তফা দেন।
এটা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার বিষয় নয়; সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেদের পুনর্গঠন এবং জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার বিষয়ও।
হেন্ড সাবরি
অভিনেত্রী
হলিউড তারকা শ্যারন স্টোন গত তিন দশক ধরে পর্দা ও পর্দার বাইরে ছাপ রেখে গেছেন।
এই অভিনেত্রী ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে বেসিক ইনস্টিংক্ট সিনেমার মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন এবং টোটাল রিকল এবং ক্যাসিনো-এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমায় অভিনয় করেন, যার জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব জিতেছিলেন এবং অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
তার সমৃদ্ধ অভিনয় জীবনের পাশাপাশি, স্টোন অনেক বিষয়ের সমর্থনে দাতব্য কাজ করেছেন। তিনি এইচআইভি রোগীদের সহায়তায় তার কাজের জন্য নোবেল লরিয়েটদের কাছ থেকে পিস সামিট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
এ বছর প্রথম গোল্ডেন গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল আইকন অ্যাওয়ার্ড দিয়ে তার সাফল্য আরও এক ধাপ সমাদৃত হয়।
আমরা হাহাকার বেছে নিতে পারি, অথবা আমরা আনন্দ বেছে নিতে পারি। আমি মনে করি আপনাকে কেবল আনন্দ বেছে নিতে হবে... জানালার বাইরে দেখতে এবং আকাশের দিকে তাকানোকে বেছে নিতে হবে।
শ্যারন স্টোন
রাজনৈতিক কর্মী এবং সাবেক বন্দি
এই বছর আগস্টে এক আন্তর্জাতিক বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া লিলিয়া চানিশেভা তার স্বাধীনতা ফিরে পেয়ে রাশিয়া ত্যাগ করেন।
তিনি রাশিয়ার বাশকোর্তোস্তান অঞ্চলে বিরোধী রাজনীতিক অ্যালেক্সি নাভালনির অফিস পরিচালনা করতেন।
তার কাজ ছিল দুর্নীতি তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালানো।
নাভালনির জন্য কাজ শুরুর আগে তিনি একজন সফল অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি মস্কোতে আন্তর্জাতিক কোম্পানির জন্য কর পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন।
২০২১ সালে চরমপন্থার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সাড়ে নয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি দুই বছর নয় মাস কারাগারে কাটানোর পর মুক্তি পান।
অ্যাক্টিভিস্ট
ভারতে দরিদ্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য বিখ্যাত অরুণা রায় তার সিভিল সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি কাজ শুরু করেন।
তিনি মজদুর কিষাণ শক্তি সংঘঠন (এমকেএসএস)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই সংগঠনটি স্বচ্ছতা এবং ন্যায্য মজুরি নিয়ে কাজ করে। ২০০৫ সালের তথ্য জানার অধিকার আইন প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা নাগরিকদের সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সক্ষম করে।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে, তিনি জনগণনির্ভর উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এ জন্য তাকে এশিয়ার নোবেল হিসেবে পরিচিত র্যামন ম্যাগসেসেসহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।
তিনি ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান উইমেনের সভাপতি এবং এই বছর তিনি তার স্মৃতিকথা, 'দ্য পার্সোনাল ইজ পলিটিক্যাল' প্রকাশ করেছেন।
আমরা প্রায়ই বৃহৎ পরিকল্পনায় মগ্ন থাকি, ফলে পাশের স্বপ্নটিকে উপেক্ষা করি।
এলজিবিটিকিউ অধিকার কর্মী
এ বছর বিবাহের সমতা বিষয়ক একটি বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর থাইল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সম লিঙ্গের বিয়ে বৈধ করে। তাই অ্যান 'ওয়াদ্দাও' চুমাপর্নের উৎফুল্ল হওয়ার কারণ তো রয়েছেই।
ঐ বিলটি সংসদ পর্যন্ত পৌছানোর যাত্রায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সংসদের সেনেট ও নিম্নকক্ষে আইনি যাচাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
দক্ষিণ থাইল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা, ব্যাংকক প্রাইডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সমকামী অধিকারকর্মী চুমাপর্ন এক দশকের বেশি সময় ধরে মানবাধিকার ও এলজিবিটিকিউ অধিকার নিয়ে সোচ্চার।
২০২০ সালে থাইল্যান্ডের তরুণদের বিক্ষোভের সময় তিনি গনতন্ত্রপন্থী ফেমিনিস্ট লিবারেশন ফ্রন্টের সমর্থক ছিলেন। তার কাজের জন্য তিনি আটটি রাজনৈতিক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।
নারীর অধিকার কর্মী
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের কণ্ঠ শোনাতে, ফাওজিয়া আল-ওতাইবি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার অবসানের জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডাকার পর তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
তার বোন মানাহেল আল-ওতাইবিও একজন নারী অধিকার কর্মী যিনি এবছর গ্রেপ্তার হন এবং অনলাইনে প্রকাশিত মতামত এবং পোশাক সংক্রান্ত অভিযোগে ১১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি।
আল-ওতাইবি তার বোনের মুক্তির জন্য নিরলস প্রচারণা চালিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে, সৌদি আরবে মতামত প্রকাশের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার কারণে অনেককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
যুদ্ধে যৌন সহিংসতা বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট
হালা আলকারিব একজন বিশিষ্ট অধিকারকর্মী এবং লেখক। তিনি 'স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভ ফর উইমেন ইন দ্য হর্ন অফ আফ্রিকা' বা সিহার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে নারী নির্যাতনের ইস্যুগুলোকে সামনে নিয়ে আসেন।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সিহা সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতার নজরদারি করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও কিশোরীদের সহায়তা দিচ্ছে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে এই সমস্যার "অতুলনীয়" মাত্রা সম্পর্কে সতর্ক করা হয় এবং আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের বিরুদ্ধে "অমানবিক অপরাধ" এর অভিযোগ আনা হয়। যদিও আরএসএফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।
সে রিপোর্ট অনুযায়ী, জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতার শিকার অন্তত ৪০০ জনকে সহায়তার জন্য রেফার করা হয়েছে। রিপোর্টে এটিকে "হিমশৈলের চূড়া" হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
নারীর অধিকার আন্দোলনকর্মী
চীনে দীর্ঘদিন ধরে নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করছেন ফেং ইউয়ান। তিনি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ইক্যুয়ালিটি বেইজিং’-এর পরিচালক। এই সংগঠনটি আইনি সংস্কার, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং একটি হেল্পলাইন ব্যবহার করে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিবেদিত।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তিনি চীনের 'মি টু' আন্দোলনের শিকারদের সমর্থন দিয়ে আসছেন এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নিয়োগকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
ফেং ১৯৮৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একজন সাংবাদিক হিসেবে নারীদের বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে, তিনি গণমাধ্যম, এইচআইভি/এইডস, নেতৃত্ব এবং যুব ক্ষমতায়ন নিয়ে নারী সংক্রান্ত বিভিন্ন এনজিও উদ্যোগ স্থাপনে সহায়তা করেছেন। তিনি চীন এবং এর বাইরেও প্রকাশনা লিখেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন।
গ্রামপ্রধান এবং বন রক্ষার কর্মী
তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলের ইকিজকয় এলাকার নবনির্বাচিত প্রধান এবং কৃষক নেজলা ইশিক পাঁচ বছর ধরে বনাঞ্চল ধ্বংসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
যখন কয়লাখনির প্রস্তাবের কারণে আকবেলেন জঙ্গল হুমকির মুখে পড়ে, ইশিক এবং স্থানীয় নারীরা তখন জমি পরিষ্কারের জন্য কাঠ কাটার কাজ বন্ধ করতে মামলা এবং বিক্ষোভের মাধ্যমে লড়াই করেন।
বন রক্ষার জন্য পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হলেও ইশিক এবং স্থানীয়রা চ্যালেঞ্জ এবং হুমকির মুখেও দৃঢ় থাকার প্রতিজ্ঞা করেন। বনাঞ্চলে প্রবেশের জন্য জরিমানা করা হলেও (পরে তা বাতিল হয়), তারা লড়াই চালিয়ে যান।
বাড়িতে, মাঠে, রাস্তায়, সংগ্রামে—নারীরাই বিশ্বকে সুন্দর করে তুলছেন, এবং নিশ্চিতভাবেই, তারা এটিকে রক্ষা করবেন।
নেজলা ইশিক
শিক্ষক এবং জলবায়ু কর্মী
ক্লাইমাসিনিয়রিনেন' বা 'সিনিয়র উইমেন ফর ক্লাইমেট প্রোটেকশন'-এর সহ-সভাপতি হিসেবে, রোজমারি উইডলার-ওয়াল্টি সুইস সরকারের বিরুদ্ধে নয় বছরের আইনি লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেন এবং ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে প্রথম জলবায়ু মামলায় জয়ী হন।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকা এবং কাউন্সেলর উইডলার-ওয়েলটি অন্যান্য দুই হাজার নারীর সঙ্গে মিলে যুক্তি দেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত তাপপ্রবাহ মোকাবেলায় সুইস সরকারের প্রতিক্রিয়া তাদের স্বাস্থ্য অধিকারে ক্ষতি করেছে, এবং তাদের বয়স ও লিঙ্গ তাদের বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
এপ্রিল মাসে, আদালত ঘোষণা করে যে দেশটির নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা ছিল অপ্রতুল।
সুইস সংসদ পরে এই রায় প্রত্যাখ্যান করলেও এই মামলা জলবায়ু সংক্রান্ত আইনি পদক্ষেপের জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সিনেটর
মেইন অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করা সুসান কলিন্স বর্তমানে তার পঞ্চম মেয়াদে আছেন এবং তিনি মার্কিন সিনেটে দীর্ঘতম দায়িত্ব পালন করা রিপাবলিকান নারী।
তিনি প্রায়ই পার্টির সীমা অতিক্রম করে কাজ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেন। তিনি ছয়জন সিনেটরের মধ্যে একজন, যারা অ্যাডভান্সিং মেনোপজ অ্যান্ড মিড-লাইফ উইমেন’স হেলথ অ্যাক্ট প্রবর্তন করেছেন, যা আগামী পাঁচ বছরে মেনোপজ গবেষণা, চিকিৎসা এবং জনসচেতনতার জন্য সাড়ে ২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
কলিন্স ন্যাশনাল অ্যালঝাইমার্স প্রজেক্ট অ্যাক্ট-এর রচয়িতা, যা অ্যালঝাইমার্স রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য একটি জাতীয় পরিকল্পনা সমন্বিত করে। তিনি প্রকল্পের জন্য ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এবং এতে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে কাজ করেছেন, বিশেষ করে ডাউন সিনড্রোমের ব্যক্তিদের মতো অবহেলিত জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য।
সাংস্কৃতিক কর্মী
কোভিড মহামারীর সময় শুরু হওয়া একটি স্থানীয় প্রকল্প 'কালচার অফ সলিডারিটি'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ড্যানিয়েল ক্যান্টর ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন অঞ্চলের দুর্বল সম্প্রদায়গুলোকে সমর্থন দিয়ে কাজ করে চলেছেন।
সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলমা বেকের সঙ্গে মিলে তিনি চালান 'হাউস অফ সলিডারিটি', যা ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের একটি বিকল্প কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি তিনি 'স্প্রেডস' নামক একটি আর্ট বুক তৈরি করেছেন। এতে খাবারের সংস্কৃতির ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের সম্প্রদায়ের পরিচয় নিয়ে রাজনীতির সূক্ষ্ম দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছে।
'উইমেন পিস সিট-ইন' সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে ক্যান্টর মধ্যপ্রাচ্যে অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির ডাক এবং একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির জন্য বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।
যখন নারীরা তাদের সহজাত সহানুভূতি কাজে লাগায়, তখন আমরা সত্যিই অবিচারের কাঠামোগুলো চিনতে পারি এবং আমাদের পথ পুনরায় কল্পনা করতে পারি।
ড্যানিয়েল ক্যান্টর
নারী অধিকার কর্মী
কুর্দি সাংবাদিক ও কর্মী ঝিনা মোদারেস গোরজি ২০১৯ সালে ঝিভানো উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশন সহ-প্রতিষ্ঠা করেন, যা শিক্ষা, প্রতিবাদ এবং সহায়তার মাধ্যমে নারীদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ইরানের “নারী, জীবন, স্বাধীনতা” আন্দোলনের শুরু থেকে তাকে দুইবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রথমে তাকে 'শাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা'সহ বিভিন্ন অভিযোগে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি কমিয়ে আনা ২ বছর ৪ মাসের সাজা ভোগ করছেন।
মোদারেস গোরজি ইরানে আইন সংস্কারের জন্য জনসমর্থন সংগ্রহকারী ওয়ান মিলিয়ন সিগনেচার ক্যাম্পেইনের সদস্য ছিলেন, যা নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইনগুলোর সমাধানে কাজ করে।
তিনি কুর্দি নারীদের একটি ফটোগ্রাফি গ্রুপ, একটি নারীদের পডকাস্ট এবং অনুপ্রেরণামূলক কুর্দি নারীদের নিয়ে একটি শিশুদের বইয়ের উদ্যোগও নিয়েছেন।
বন্দি মুক্তি ক্যাম্পেইনার
সিঙ্গেল মা এইনাভ জাংগাউকেরের ২৪ বছর বয়সী ছেলে মাতানকে হামাসের ৭ অক্টোবরের আক্রমণে জিম্মি করা হয়। তার ছেলের সঙ্গী ইলানাকে আলাদা করে অপহরণ করা হয়, যাকে পরে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়।
এরপর থেকে, তিনি জিম্মি সংকট নিয়ে অবিরাম সচেতনতা বৃদ্ধি করে চলেছেন, নেতাদের পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন এবং জনসাধারণকে প্রতি সপ্তাহে বিক্ষোভে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করছেন।
জাংগাউকের ইসরায়েল সরকারের কড়া সমালোচক হয়ে উঠেছেন, যদিও এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর শাসক দলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
তিনি অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির দাবি জানাচ্ছেন।
রাজনীতিবিদ
লিঙ্গ সমতায় কাজের জন্য পরিচিত হুয়াং জি জানুয়ারিতে তাইওয়ানের প্রথম প্রকাশ্যে এলজিবিটিকিউ+ আইন প্রণেতা হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তার রাজনৈতিক কর্মজীবনে, তিনি একক নারী এবং সমকামী দম্পতিদের সন্তান ধারণের চিকিৎসার অধিকার এবং মাসিক দারিদ্র্যের মতো বিষয়গুলোতে বড় ধরনের আইন সংস্কারের জন্য কাজ করেছেন।
২০২৩ সালে প্রকাশ্যে আসার পর যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন সে সম্পর্কে খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন। তিনি ডিজিটাল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন আরও কঠোর করার আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ তিনিও ডিপভেক পর্নোগ্রাফির শিকার।
সত্যিকারের দৃঢ়তা হলো বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করা। আমরা যত বেশি কণ্ঠ এক করব, আমরা তত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠব, বিশেষ করে সেই কণ্ঠগুলো যেগুলো একসময় দুর্বল হিসেবে গণ্য হতো – যেমন নারী এবং এলজিবিটিকিউ+
হুয়াং জি
প্রজনন অধিকার আইনজীবী
২০২২ সালের অগাস্টে আমান্ডা জুরাওস্কি জানতে পারেন যে তার গর্ভের পানি আগেই ফেটে গেছে, এবং ডাক্তাররা জানান ভ্রূণটি বাঁচবে না।
টেক্সাসের বাসিন্দা জুরাওস্কি তখন গর্ভপাতের অনুমতি পাননি। কারণ সুপ্রিম কোর্টে রো বনাম ওয়েড মামলার রায় বাতিল হওয়ার পর সেখানে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিন দিন পর তিনি সেপটিক শকে পড়েন। তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়লে শেষ পর্যন্ত গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে, জুরাওস্কি ও আরও ১৯ জন নারীর সমন্বয়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে টেক্সাসে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে টেক্সাস সুপ্রিম কোর্ট সেই চ্যালেঞ্জ প্রত্যাখ্যান করে।
জুরাওস্কি এখন দেশে প্রজনন অধিকারের পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিবাসন অধিকার কর্মী
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি এবং জাতি বা শ্রেণীর সংযোগস্থলে কাজ করছেন গার্লিন এম. জোসেফ, অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তিনি নারী-নেতৃত্বাধীন হাইতিয়ান ব্রিজ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা, যা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষদের নিয়ে কাজ করে।
তার নেতৃত্বে, সে অ্যালায়েন্স এই বছর ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে। কারণ তিনি ওহাইওর স্প্রিংফিল্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে হাইতিয়ান অভিবাসীদের "পোষা প্রাণী খাওয়ার" ভিত্তিহীন দাবি করেছিলেন।
জোসেফ দীর্ঘদিন ধরে হাইতিয়ানদের বিতাড়িত করার বিষয়ে একজন সোচ্চার সমালোচক। তার সংস্থা সম্প্রতি বাইডেন প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে, যারা তাদের নিজ ভূমিতে বিভিন্ন গ্যাং-এর সহিংসতার কারণে পালিয়ে আশ্রয় চাইতে আসছেন, তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করতে।
বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির প্রচারক
উগান্ডায় সমকামী সম্পর্ক অবৈধ এবং এর জন্য জেল হতে পারে। তবে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারকর্মী কাশা নাবাগেসেরা সে দমনমূলক আইন পরিবর্তনে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
একজন খোলামেলা সমকামী নারী হিসেবে, তিনি আফ্রিকা জুড়ে এলজিবিটিকিউ+ বিরোধী স্টিগমার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছেন।
নাবাগেসেরা সংবাদপত্র এবং উগান্ডা সরকারের বিরুদ্ধে এলজিবিটিকিউ+ বিরোধী বক্তব্যের জন্য মামলা করেছেন। তিনি দুবার উগান্ডার আদালতে সমকামীতা-বিরোধী আইন চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং বর্তমানে ২০২৩ সালে পাশ হওয়া একটি আইনের বিরুদ্ধেও লড়ছেন।
তিনি এনকুম্বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ছিলেন। এছাড়াও, তিনি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং আফ্রিকান কমিশনের মতো ফোরামে বৈচিত্র্য বিষয়ক উদ্যোগে অবদান রেখেছেন।
ধর্ষণের পরিস্থিতি পার করে আসা ক্যাম্পেইনার
নিজের গোপনীয়তার অধিকার ত্যাগ করে এবং তার গল্প বিশ্বে পৌঁছানোর সুযোগ দিয়ে, জিসেল পেলিকট সাহস ও দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
তার প্রাক্তন স্বামী স্বীকার করেছেন যে তিনি বিয়ের সময় তাকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণ করেছিলেন এবং অন্য অনেক পুরুষকে তাকে ধর্ষণ করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। বেশিরভাগ অভিযুক্ত ধর্ষণের ভিডিও করা হয়েছিল।
আইন অনুযায়ী, পেলিকট গোপনীয়তার অধিকার পেয়েছিলেন, তবে তিনি তা না করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর এবং ভিডিও দেখানোর অনুরোধ করেন, যাতে লজ্জার দায় অভিযুক্তদের উপর যায়। মামলায় জড়িত ৫০ জনের মধ্যে কিছু পুরুষ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন, তবে বেশিরভাগই বলেছেন তারা শুধুমাত্র যৌন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন।
যখন বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর বিশ্বজুড়ে নারীরা এই ফরাসি ভদ্রমহিলার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি আশা করেন যে তার মামলা ফরাসি আইন এবং ধর্ষণ ও সম্মতির বিষয়ে সমাজের মনোভাব পরিবর্তন করবে।
যৌনকর্মীদের অধিকার বিষয়ক ক্যাম্পেইনার
ব্রাজিলে যৌনকর্মীদের অধিকারের জন্য অগ্রণী প্রচারাভিযানের নেতৃত্বদানকারী লুরদেস বারেতো তার জীবন যৌনকর্মীদের অধিকার উন্নয়নে নিবেদিত করেছেন।
আমাজন অঞ্চলের বেলেম দো পারা-তে তার কর্মজীবন শুরু করে, তিনি ১৯৮০-এর দশকে ব্রাজিলিয়ান নেটওয়ার্ক অফ প্রস্টিটিউটস সহ-প্রতিষ্ঠা করেন – লাতিন আমেরিকার যৌনকর্মীদের প্রথম সংগঠিত আন্দোলনগুলির মধ্যে একটি।
বর্তমানে আশির দশকে থাকা বারেতো কয়েক দশক ধরে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন।
এইচআইভি প্রতিরোধ নীতিমালা তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং সোনার খনির সম্প্রদায়ের মধ্যে এইচআইভি বিস্তার প্রতিরোধের জন্য প্রচারণা চালান।
২০২৩ সালে, তিনি তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।
আমাদের গল্পকে মূল্যায়ন করা হোক এবং থামিয়ে না দেয়া হোক। আমরা পৃথিবীর নারীরা, আমাদের অসীম স্বপ্ন দেখার, অর্জন করার, ভাবার এবং সমাজকে রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখি।
লুরদেস বারেতো
চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক কর্মী
পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত নারীর মধ্যে একজন মাহরাং বালোচ, যিনি বেলুচিস্তান প্রদেশে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
তার ন্যায়বিচারের দাবি এসেছে তার বাবা ২০০৯ সালে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দ্বারা ধরে নেওয়ার অভিযোগ এবং দুই বছর পরে নির্যাতনের চিহ্নসহ মৃত অবস্থায় পাওয়ার পর।
২০২৩ সালের শেষের দিকে, পরিবারের সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বালোচ শত শত নারীকে নেতৃত্ব দিয়ে ১,০০০ মাইল (১,৬০০ কিমি) দীর্ঘ পদযাত্রা করেন রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে। যাত্রার সময় তাকে দু'বার গ্রেপ্তার করা হয়।
বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রতিবাদকারীরা দাবি করেন, তাদের প্রিয়জনদের পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা বিদ্রোহ দমনের নামে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই চিকিৎসক এরপর থেকে তার নিজের মানবাধিকার সংগঠন বেলোচ ইয়াকজেহতি (ঐক্য) কমিটির অধীনে একজন বিশিষ্ট কর্মী হয়ে উঠেছেন। মানবাধিকার বিষয়ে তার কাজ ২০২৪ সালের 'টাইম ১০০ নেক্সট' তালিকায় স্বীকৃতি পেয়েছে।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা
নভেম্বরে নির্বাচিত হয়ে কেমি ব্যাডেনক যুক্তরাজ্যের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী নেতা হয়েছেন।
তিনি বর্তমানে নর্থ ওয়েস্ট এসেক্স থেকে সংসদ সদস্য এবং আগে ছিলেন বাণিজ্য সচিব এবং নারীদের ও সমতার বিষয়ক মন্ত্রী।
ব্যাডেনক লন্ডনে নাইজেরিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাইজেরিয়ার লেগোস এবং আমেরিকায় বেড়ে ওঠেন। নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির কারণে তিনি ১৬ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনীতিতে আসার আগে, তিনি বেসরকারি ব্যাংক কাউটসের সহযোগী পরিচালক এবং দ্য স্পেকটেটর ম্যাগাজিনের ডিজিটাল ডিরেক্টর ছিলেন।
খনি শ্রমিক
কঙ্গোর খনির ব্যবসায় একজন নারী হিসেবে, অ্যানি সিনানদুকু মওয়াঙ্গে শিল্পের বৈষম্য ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে খনিগুলোর শ্রমিকদের অর্ধেকই নারী।
জাতীয় নারী খনি নেটওয়ার্ক 'রেনাফেমে'র নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে ‘মের বস’ বা ‘মা বস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যেখানে নারীদের খনি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা যৌন শোষণ প্রতিরোধে সহায়ক।
নারীদের জীবিকা নির্বাহের জন্য বিনিয়োগ করে তিনি শিশু শ্রম হ্রাসের বিষয়েও আশাবাদী, যেখানে বৈশ্বিক বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো ক্লিন এনার্জি পণ্যের জন্য কোবাল্ট এবং অন্যান্য খনিজের চাহিদা বাড়ছে।
রাজনীতিবিদ
নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ মাওরি নারী ২২ বছর বয়সী হানা-রাউহিতি মাইপি-ক্লার্ক।
তাঁর প্রথম বক্তৃতার সময় তিনি বিখ্যাত মাওরি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য হাকা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আদিবাসী কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দাবি তোলেন। সম্প্রতি, তিনি আরেকটি হাকা নেতৃত্ব করেন, যা একটি বিতর্কিত বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে সংসদকে থামিয়ে দিয়েছিল।
মাইপি-ক্লার্ক মাওরি অধিকার, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি মাওরি চন্দ্র ক্যালেন্ডার নিয়ে প্রথম বই প্রকাশ করেন।
এই বছর তিনি রাজনীতিতে তরুণ আদিবাসী কণ্ঠকে প্রসারিত করার প্রচেষ্টার জন্য মর্যাদাপূর্ণ ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড পলিটিশিয়ান অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার পেয়েছেন।
নারীদের এমন জায়গায় প্রবেশ করতে হবে যেখানে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তা স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক, যে স্তরে হোক না কেন।
হানা-রাউহিতি মাইপি-ক্লার্ক
মানবাধিকার আইনজীবী
ভেনেজুয়েলার কারাকাসে 'হোসে ম্যানুয়েল দে লস রিওস' শিশু হাসপাতালে অনেক শিশু রয়েছে যারা নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা বা একক অভিভাবকের পরিবার।
ক্যাথরিন মার্টিনেজের প্রতিষ্ঠা করা বেসরকারি সংস্থা প্রেপারা ফ্যামিলিয়া তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র - যেমন পোশাক, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাবার এবং মানসিক সহায়তা প্রদান করে।
একজন মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে, মার্টিনেজ এবং তার দল হাসপাতালে শিশু এবং নারী অভিভাবকদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য রেকর্ড করেন, যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে।
ভেনেজুয়েলায় উচ্চ মাত্রার অপুষ্টির মুখোমুখি হয়ে, প্রেপারা ফ্যামিলিয়া একটি কেন্দ্র খুলেছে যা শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে পুষ্টি সম্পূরক ও ভিটামিন সরবরাহ করে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী
নাদিয়া মুরাদ যৌন সহিংসতার শিকারদের অধিকার আদায়ে কাজ করছেন। তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী এবং নোবেলজয়ী যিনি ইরাকে ইয়াজিদি গণহত্যার শিকার হন। ১০১৪ সালে ইসলামিক ষ্টেট গোষ্ঠীর হাতে বন্দি হয়ে নির্যাতিত হলেও পালিয়ে এসে সাহসিকতার সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা বিশ্বকে জানিয়েছেন।
তাকে আইএস জঙ্গিরা বন্দী করে, দাসত্বে বাধ্য করে এবং তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তিন মাস পর মুরাদ পালিয়ে যান, এবং সংঘাতের সাথে সম্পর্কিত যৌন সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের কাছে তার অগ্নিপরীক্ষার কথা সাহসের সাথে বর্ণনা করেছে।
তিনি মানবাধিকার আইনজীবী আমাল ক্লুনির সঙ্গে কাজ করে আইএস-কে জবাবদিহি করার চেষ্টা করেছেন এবং নাদিয়া'স ইনিশিয়েটিভ শুরু করেছেন, যা সম্প্রদায় পুনর্গঠনে এবং নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণের জন্য কাজ করে।
ইয়াজিদি গণহত্যার দশ বছর পর, মুরাদ দৃঢ়তার এক বৈশ্বিক প্রতীক হয়ে রয়েছেন।
"সমতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যা অন্তর থেকে শক্তি আনে - সত্য, আশা এবং সহানুভূতি।"
নাদিয়া মুরাদ
আইরিশ ভ্রমণকারী আন্দোলনের কর্মী
মাত্র ২০ বছর বয়সে, লাতিশা ম্যাকক্রুডেন ইতিমধ্যেই আয়ারল্যান্ডের আইরিশ ট্র্যাভেলার সম্প্রদায়ের জন্য একজন সাহসী কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
নিজেই একজন আইরিশ ট্র্যাভেলার সম্প্রদায়ের সদস্য, তিনি আয়ারল্যান্ডে জাতিগত সংখ্যালঘুদের চারপাশে থাকা ট্যাবু ভাঙতে চান এবং একজন পারিবারিক সহিংসতা পার করে আসা ব্যক্তি হিসেবে নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান।
গলওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ছাত্রী ম্যাকক্রুডেন আইরিশ ট্র্যাভেলার মুভমেন্ট ন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরাম, আয়ারল্যান্ডের জাতীয় মহিলা কাউন্সিল এবং মিন্সেইরস হুইডেন নামে ট্র্যাভেলার সাপোর্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
তিনি আশা করেন যে ২০২৯ সালে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে আয়ারল্যান্ডের ভবিষ্যতের জন্য পরিবর্তন আনবেন।
উপ-প্রধানমন্ত্রী
অ্যাঞ্জেলা রেনার জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনের পরে ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হন
স্টকপোর্টে জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে ওঠা রেনার অল্প বয়স থেকেই মায়ের দেখাশোনা করতেন এবং ১৬ বছর বয়সে গর্ভবতী অবস্থায় স্কুল ছেড়ে দেন। তিনি স্থানীয় কাউন্সিলে সামাজিক সেবা বিভাগে কাজ করেছিলেন এবং পরে ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি হন।
২০১৫ সালে অ্যাশটন-আন্ডার-লাইনের প্রথম নারী প্রতিনিধি হিসেবে তিনি লেবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি পরে নারী ও সমতার শ্যাডো মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বর্তমানে আবাসন, গোষ্ঠী এবং স্থানীয় সরকারের রাজ্যসচিব।
আইনজীবী
আইন ও বিচার বিষয়ে উদ্যমী রুথ লোপেজ মধ্য আমেরিকায় গণতন্ত্রের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টোসালের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
দুর্নীতি দমন, নির্বাচনি আইন ও এল সালভাদরে মানবাধিকারের সংরক্ষণ বিষয়ে কাজ করেন তিনি।
দেশটির সরকার ও প্রতিষ্ঠানের একজন সমালোচক হিসেবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও নাগরিকদের দায়বদ্ধতা উন্নয়নে কাজ করেন।
এই বছরের শুরুতে নাইব বুকেলে দ্বিতীয় বারের মত এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার কাজ আরো পরিচিতি পায়। অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া বুকেলে নিজেকে বলেন 'বিশ্বের সবচেয়ে দারুণ স্বৈরাচার।'
জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের মামলায় বাদী
জন্মগতভাবে সেরিব্রাল পালসি নিয়ে জন্মানো ইউমি সুজুকি ছোটবেলা থেকেই বৈষম্যের শিকার হন। মাত্র ১২ বছর বয়সে, তাকে হিস্টেরেক্টমি করা হয়, যা জরায়ু অপসারণের একটি শল্য চিকিৎসা।
১৯৫০ থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত, সুজুকির মতো প্রতিবন্ধী অনেককেই জাপানে একটি ইউজেনিক্স আইনের কারণে জোরপূর্বক বন্ধ্যা করা হয়, যা ১৯৯৬ সালে বাতিল করা হয়।
সুজুকি এবং আরও ৩৮ জন মামলাকারী সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন, এবং আদালতে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, তিনি মামলায় জয়ী হন। জুলাই মাসে, জাপানের সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারকে আদেশ দেয়।
সরকার স্বীকার করেছে যে ১৬,৫০০ বন্ধ্যাকরণ প্রক্রিয়া তাদের সম্মতি ছাড়াই পরিচালিত হয়েছিল।
ইকোলজিস্ট
ট্রান্সউইম্যান জীববিজ্ঞানী ব্রিজিট ব্যাপটিস্টে, জীববৈচিত্র্য এবং লিঙ্গ পরিচয়ের মধ্যেকার সাধারণ প্যাটার্ন খুঁজতে কাজ করেন।
তিনি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রকৃতি এবং প্রজাতি বিশ্লেষণ করেন, যাতে 'প্রকৃতি' ধারণা সম্প্রসারিত করা যায় এবং বাস্তুতন্ত্রকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করা যায়। ২০১৮ সালের টেডএক্স আলোচনায় তিনি কলম্বিয়ার জাতীয় গাছ 'কুইন্দিও মোম পামে'র উদাহরণ দিয়েছিলেন, যা জীবনের বিভিন্ন সময়ে পুরুষ থেকে নারী লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পরিচিত।
একজন স্বনামধন্য একাডেমিক ব্যাপটিস্টে ১০ বছর আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে বোগোটার ইউনিভার্সিদাদ ইএএন-এ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন যেটি টেকসই উদ্যোগে জোর দেয়া একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও এলজিটিবিকিউ+ মানুষকে উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উন্নত তহবিলের প্রচারণা চালিয়েছেন।
টেকসই পরিবেশ উদ্যোক্তা
সিলসিলা আচার্য নেপালের বৃহত্তম প্লাস্টিক রিসাইক্লিং নেটওয়ার্কগুলির একটি পরিচালনা করেন। তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবসা 'আভনি ভেঞ্চারস' প্রান্তিক সম্প্রদায় থেকে কর্মী নিয়োগ করে এবং সবুজ খাতে আরও বেশি সংখ্যক নারীদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করে।
না ধন্যবাদ, আমি আমার নিজের ব্যাগ বহন করি,' ২০১৪ সালের এমন প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি যা প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধে ভূমিকা রেখেছিল।
আচার্য একটি বার্ষিক হিমালয় পরিচ্ছন্নতা অভিযানের কাজেও রয়েছেন, যেখানে পর্বতারোহীদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে ১১৯ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
তার কাজের মাধ্যমে, কিছু বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার করে আদিবাসী নারী কারুশিল্পীরা ঝুড়ি, ম্যাট এবং গয়না তৈরি করেন। এভাবে তাদের জীবিকা নির্বাহও হয়।
শিশু বিশেষজ্ঞ
ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং সম্পদের তীব্র অভাব শিরীন আবেদকে গাজায় নবজাতকদের যত্ন নেওয়া থেকে থামাতে পারেনি।
২০২৩ সালে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার ফ্ল্যাট বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তিনি বাস্তুচ্যুত হন। কিন্তু নবজাতক বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি কাছাকাছি শরণার্থী ক্যাম্পে শিশুদের যত্ন নিতে থাকেন।
গাজার প্রধান হাসপাতালগুলোর নবজাতক ইউনিটে কাজের বহু বছরের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে—সবশেষ আল-শিফা মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের প্রসূতি কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে—তিনি সীমিত সম্পদ দিয়ে জীবন রক্ষার চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি প্রোটোকল তৈরি করেন এবং অন্যান্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেন।
এ বছর তিনি তার দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে গাজা ছাড়তে বাধ্য হন। তবে তিনি এখনও স্থানীয় চিকিৎসকদের দূর থেকে সহায়তা করে যাচ্ছেন।
কৃষি প্রকৌশলী
যুদ্ধের কারণে গাজায় যখন পানি সংকট দেখা দেয়, তখন এনাস আল-গুল এর সমাধান খুঁজে বের করতে উদ্যোগী হন।
কৃষি প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কাঠ, কাচ ও ত্রিপলসহ পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ দিয়ে একটি সৌরশক্তি চালিত লবণাক্ত পানি শোধন যন্ত্র তৈরি করেন, যা সমুদ্রের পানি পানযোগ্য করতে পারে।
এই যন্ত্রটি গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিস অঞ্চলের তাঁবুতে বসবাসরত বহু মানুষের জন্য লাইফলাইন হয়ে উঠেছে, যেখানে ইসরায়েলি সামরিক হামলার পর থেকে পানি ও স্যানিটেশন সুবিধাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আল-গুল সৌরশক্তি চালিত কুকারও তৈরি করেছেন এবং গদি ও ব্যাগের মতো জিনিস তৈরি করতে উপকরণ পুনর্ব্যবহারের কৌশল শিখেছেন।
গত বছর সুদানে তার হাসপাতালের কাছে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে, ডাঃ সাফা আলি তার সহকর্মীদের সাথে পালানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রয়ে যান, যদিও অবিরাম গোলাবর্ষণ চলছিল।
একজন প্রসূতিবিদ ও গাইনোকলজি বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি স্বেচ্ছাসেবী কর্মী এবং গর্ভবতী নারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছিলেন। সেনাবাহিনী এবং আধা-সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের সহিংস সংঘর্ষের মধ্যে এটি ঘটে।
বর্তমানে আল-সৌদি ম্যাটারনিটি হাসপাতালে প্রসূতিবিদ হিসেবে তিনি সিজারিয়ান অপারেশন করেন এবং চলমান সংঘাতের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা করেন।
পাশাপাশি, তিনি প্রায় ২০ জন নতুন স্নাতক নারী চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেন, যা চিকিৎসা কর্মীর ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।
আমি বিশ্বাস করি যে নারীদের প্রতিরোধের মাধ্যমে নিরাময়ের, ন্যায়বিচারের, এবং ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি তৈরি হয়, যেখানে আমরা আর ভয়ের মধ্যে বাঁচতে বাধ্য হব না। নারীদের শক্তিই আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, অন্ধকারতম মুহূর্তেও আশা এখনও বেঁচে আছে।
সাফা আলী
ফেম-টেক উদ্যোক্তা
যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষাবিদ নূর ইমাম মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় নারীদের জন্য মাসিক স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং যৌন সচেতনতার মতো প্রায় নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করেন।
তিনি মাদারবিং নামের একটি ফেম-টেক (নারী প্রযুক্তি) কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। এটি কায়রোর একটি ক্লিনিক এবং একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেবিভিন্ন ধরণের পরিষেবা প্রদান করে। এর উদ্দেশ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের স্বাস্থ্যসেবায় সুযোগ বাড়ানো।
তার লক্ষ্য নারীদের নিজেদের শরীর সম্পর্কে প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান দিয়ে ক্ষমতায়িত করা, পাশাপাশি গর্ভনিরোধ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করা এবং লজ্জার ভয় ছাড়াই সংবেদনশীল বিষয়গুলি পর্যালোচনা করতে সহায়তা করা।
মহাকাশচারী
নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস ৫ জুন বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে চড়েন। তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) আট দিনের মিশনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
কিন্তু যানে ত্রুটির কারণে, তাঁকে জানানো হয় যে তিনি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন না।
তিনি নৌবাহিনীর সাবেক হেলিকপ্টার পাইলট এবং নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মহাকাশযাত্রার রেকর্ডধারী। ২০০৭ সালে মহাকাশে প্রথমবার ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেন।
এখন ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিমি উচ্চতায় পরিবার ও বন্ধুদের থেকে দূরে থাকলেও, তিনি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকছেন এবং মহাকাশযানটিকে তার “আনন্দের জায়গা” বলে বর্ণনা করছেন।
রাসায়নিক জীববিজ্ঞানী
বিজ্ঞানী রোসা ভাসকেজ এসপিনোজা তার দাদীর ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যের সমন্বয় করে পেরুর আমাজন রেইনফরেস্টের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছেন।
তিনি জঙ্গলের অপরিচিত জীববৈচিত্র্য খুঁজতে আমাজন রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছেন।
তিনি পৃথিবীর একেবারে বিচ্ছিন্ন এবং দূরবর্তী অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন এবং আমাজনের বিখ্যাত 'বয়লিং রিভার' বা ফুটন্ত নদীতে নতুন ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছেন। এছাড়াও পেরুর হুল না ফোটানো মৌমাছি এবং ঔষধি মধুর প্রথম রাসায়নিক বিশ্লেষণ পরিচালনা করেছেন।
তিনি দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী আষানিংকা জনগণের আন্তর্জাতিক দূতও।
কৃষক
২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর ওলগা ওলেফিরেঙ্কো একটি খামার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। গবাদি পশু কিনে কাজ শুরু করলেও আর্থিক সমস্যায় পড়ে তাকে সমস্ত পশু বিক্রি করতে হয়েছিল।
কিন্তু তিনি তার বাবার আকাঙ্ক্ষাকে ছেড়ে দিতে চাননি - যিনি ডনবাসে নৌবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে সম্মুখসারিতে দায়িত্ব পালন করার সময় নিহত হন।
গত বছর তিনি ইউক্রেনিয়ান ভেটেরান ফান্ড থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন এবং সফল হন।
ওলেফিরেঙ্কো আবার তার খামার চালু করেন। তিনি এর আধুনিকীকরণ, নতুন কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করেন। তার উদ্যোগ ও নেতৃত্ব স্থানীয়দের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
প্রোগ্রামার এবং ডেটা সায়েন্টিস্ট
তার মাতৃভাষা নাউয়াতল, গুগলের বহুল ব্যবহৃত অনুবাদ প্ল্যাটফর্মে ভাষাটি পাওয়া যেতো না। তবে গ্যাব্রিয়েলা সালাস কাব্রেরা এতে যুক্ত হয়ে তা পরিবর্তন করেন।
মেক্সিকোর এই ভাষা এবং অন্যান্য আদিবাসী ভাষাকে গুগল অনুবাদে সংযুক্ত করতে ভাষাবিজ্ঞানের প্রকল্পের সাথে যুক্ত টেক জায়ান্টের সাথে কাজ করেছেন এই প্রকৌশলী। নাউয়াতল অনুবাদ এই বছরের শুরুতেই জনগণের জন্য সামনে এসেছে।
সালাস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) শক্তি ব্যবহার করে উপেক্ষিত ভাষাগুলির সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতে আদিবাসী নারীদের উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করেন।
তিনি অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং এবং এআই-এ বিশেষজ্ঞ এবং বর্তমানে স্পেনের মাদ্রিদের ইউনিভার্সিদাদ পলিটেকনিকা-তে ডেটা সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
নারীর দৃঢ়তা বা সহনশীলতা এমন এক শিখা যা কখনো নেভে না। এটি ব্যথাকে উদ্দেশ্যে পরিণত করে এবং যারা অনুসরণ করে তাদের জন্য পথ আলোকিত করে।
গ্যাব্রিয়েলা সালাস কাব্রেরা
বায়োকেমিস্ট এবং নোবেল পুরস্কারজয়ী
হাঙ্গেরিয়ান বায়োকেমিস্ট কাটালিন কারিকোর মডিফাইড মেসেঞ্জার আরএনএ বা mRNA নিয়ে বিখ্যাত গবেষণা বায়োএনটেক/ফাইজার এবং মডার্নার কোভিড-১৯ টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি তাঁকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে (সহকর্মী ড্রু ওয়েইসমানের সাথে যৌথভাবে), যা "মানবস্বাস্থ্যের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকির সময়ে ভ্যাকসিন উন্নয়নের নজিরবিহীন গতি"তে তাঁর অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।
mRNA আমাদের ডিএনএ থেকে প্রোটিন তৈরির জন্য দায়ী, তবে এটি অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং কাজ করা কঠিন। তবে কারিকো নিশ্চিত ছিলেন যে এটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
মহামারীর আগে এই প্রযুক্তি ছিল পরীক্ষামূলক, তবে এখন এটি সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বদা আপনার যা করতে পারেন সেটির উপর মনোযোগ দিন, অন্যদের কী করা উচিত সেদিকে নয়। যদি আপনি ব্যর্থ হন, তা থেকে শিখুন। একই উদ্যম নিয়ে আবার উঠে দাঁড়ান এবং এগিয়ে যান।
কাটালিন কারিকো
কৃষক এবং প্রশিক্ষক
একটি প্রশিক্ষণ খামারের কৃষি গাইড হিসেবে নাওমি চান্ডা তার সম্প্রদায়কে এমন পদ্ধতিতে কাজ করতে উৎসাহিত করছেন যা জমিকে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করে।
তিনি ‘জলবায়ু-স্মার্ট’ দক্ষতার ওপর জোর দেন - যেমন কম পানি ব্যবহারকারী ড্রিপ সেচ, অথবা স্বল্প-সময়ের ফসল চাষ। সেখানে নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানের কেন্দ্রে রাখা হয়।
মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘ক্যামফেড’-এর সঙ্গে চান্ডা প্রায় ১৫০ তরুণীকে কৃষি প্রযুক্তি মানিয়ে নেওয়া এবং তা জলবায়ু সংকটের মুখে টিকে থাকার উপযোগী করে তোলার প্রশিক্ষণ দেন, বিশেষত জাম্বিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশে যেখানে দীর্ঘ খরা এবং ঋতুগত পরিবর্তন ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
জলবায়ু আইনজীবী
নাইজেরিয়ান ইকোফেমিনিস্ট আডেনিকে টিটিলোপে ওলাদোসু 'আই লিড ক্লাইমেট অ্যাকশন' এর প্রতিষ্ঠাতা, যা নারী এবং তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোগ।
তিনি নাইজেরিয়ার লেক চাদের পরিবেশগত সংকট সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছেন, যেখানে কমে যাওয়া পানি সম্পদের সংঘাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
ওলাদোসু তার কাজের মাধ্যমে পরিবেশগত এবং সামাজিক উভয় সমস্যার সমাধান করেন, বিশেষত যা আফ্রিকান নারীদের প্রভাবিত করে। তিনি মরুকরণের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলে টেকসই কৃষিতে নারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলেন।
২০১৯ সাল থেকে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বেশ কয়েকটি সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি নীতিনির্ধারকদের আফ্রিকায় জলবায়ু সহনীয়তায় অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জলবায়ু সংকট একটি লড়াই করার ক্ষমতা বা দৃঢ়তার বিষয় যেখানে আমাদের বিজয়ী হওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। এই সংকট থেকে বাঁচতে আমাদের প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ প্রয়োজন।
আডেনিকে টিটিলোপে ওলাদোসু
প্রতিষ্ঠাতা, স্টেয়ার ক্রাশার ক্লাব
সুবিন পার্ক, একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী, সিউলের এমন অনেক জায়গার কথা তুলে ধরেছেন, যেগুলো প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশযোগ্য নয়। তিনি তার আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করেন।
তিনি স্টেয়ার ক্রাশার ক্লাব নামে একটি অলাভজনক প্রকল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা দক্ষিণ কোরিয়ার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য অসুবিধার রুট এবং জায়গার তথ্য সংগ্রহ করে যেখানে সিঁড়ি ছাড়া ওঠা যায় না।
তাদের প্রকল্পের লক্ষ্য ব্যবহারকারীদের জন্য একটি মানচিত্র তৈরি করা।
এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ স্টেয়ার ক্রাশার ক্লাবের ইভেন্টের মাধ্যমে অংশ নিয়েছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ১৪,০০০ এর বেশি জায়গা চলাচলের জন্য যাচাই করা হয়েছে।
নার্স এবং স্কুল প্রতিষ্ঠাতা
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেন নার্স রিক্তা আক্তার বানু। যেখানে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুকে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়।
নিজের অটিস্টিক এবং সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত কন্যাকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারেননি বলে তিনি নিজের জমি বিক্রি করে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
"রিক্তা আক্তার বানু লার্নিং ডিজেবিলিটি স্কুল" এখন ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করে এবং এটি প্রতিবন্ধিতার প্রতি সমাজের মনোভাব পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য নির্মিত হলেও এখন এটি বিভিন্ন ধরণের বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুদের জন্যও সেবা প্রদান করে।
ডিআইওয়াই বিজ্ঞান সামগ্রী নির্মাতা
ইরিত্রিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এবং সুদানে বেড়ে ওঠা সারা বারকাই লন্ডনে বড় হয়েছেন। তিনি তার পরিবারের মধ্যে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং শিশুর বিকাশ নিয়ে পড়াশোনা করেন।
তিনি অ্যামবেসা প্লে নামক একটি সামাজিক উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা, যা শিশুদের জন্য বিভিন্ন ডিআইওয়াই শিক্ষা সামগ্রী ডিজাইন করে এবং তাদের খেলনার ডিজাইনে অংশ নিতে উৎসাহিত করে।
বারকাইয়ের কাজ বিভিন্ন দেশের বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুদের খেলার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে।
তার উদ্ভাবনী প্রচেষ্টাগুলোর স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ফোর্বসের থার্টি আন্ডার থার্টি তালিকায় সামাজিক প্রভাবশালী হিসেবে স্থান পান।
দৃঢ়তা হলো আশাবাদকে কাজে পরিণত করা—ভালো ভবিষ্যতের জন্য অবিচল প্রতিশ্রুতি, যা ভালোবাসার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে।
সারা বারকাই
কনটেন্ট মডারেটরদের ইউনিয়নের নেতা
কাউনা মালগউই প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শিল্পে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে জোরালো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মালগউই নাইজেরিয়ার কনটেন্ট মডারেটর ইউনিয়ন-এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এআই সিস্টেম প্রশিক্ষণে প্রয়োজনীয় অদৃশ্য শ্রমের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন।
ফেসবুকের জন্য আউটসোর্স করা কনটেন্ট মডারেটর হিসেবে কাজ করার সময় মালগউই ধর্ষণ, আত্মহত্যা এবং শিশু নির্যাতনের ভিডিওর মুখোমুখি হন, যা তাকে অনিদ্রা এবং প্যারানয়ায় ভুগতে বাধ্য করে।
তিনি ১৮৪ জন প্রাক্তন মডারেটরের একজন, যারা ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা এবং কেনিয়ার সাব-কন্ট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির জন্য মামলা করেছেন।
তিনি কনটেন্ট মডারেটরদের অধিকার রক্ষায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
নারীরা আমাদের বিভক্ত বিশ্বে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং মানসিক সুস্থতাকে মূল্যায়ন করার একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং পরিবর্তন আনতে পারে।
কাউনা মালগউই
প্রতিষ্ঠাতা, সুপারহিউম্যানস সেন্টার
রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর, ওলগা রুডনিভা অনুভব করেছিলেন যে তাকে এই সংঘর্ষে আহতদের সাহায্য করতে কিছু করতে হবে।
যুদ্ধে অঙ্গহানি হওয়াদের অনেককেই ভুক্তভোগী হিসেবে করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয়েছিল। কিন্তু রুদনিভার মতে তারা ‘সুপারহিউম্যান’ বা অতিমানব, যারা তার সর্বোচ্চ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য।
তিনি লাভিভে সুপারহিউম্যানস ট্রমা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। সিইও হিসেবে একটি বিশেষজ্ঞ দল সঙ্গে নিয়ে তিনি সেটা পরিচালনা করেন। এই সেন্টার রোগীদের জন্য প্রতিস্থাপন অঙ্গ সরবরাহ করে এবং সম্প্রতি একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করেছে।
প্রথম দুই বছরের মধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষ তাদের সেবা পেয়েছে।
দৃঢ়তা হচ্ছে প্রতিদিন সকাল-বিকেল সাইরেনের শব্দে জেগে উঠা এবং দেশের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া। এটি 'আমি কেন?' এমন ধারণায় আটকে না থেকে ‘কিসের জন্য?’ সেটা পুনরায় আবিষ্কার করা। এটি হচ্ছে প্রতিদিন কম কিছু নিয়ে আরও কিছু করার পথ খোঁজা।
ওলগা রুদনিভা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ
২০ বছর বয়সেই স্নেহা রেভানুর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গেছেন। তিনি এনকোড জাস্টিস নামের একটি বৈশ্বিক যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এটি সুরক্ষিত ও ন্যায্য এআই নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। ৩০টি দেশে এর সদস্য সংখ্যা ১,৩০০ এরও বেশি।
রেভানুরের কাজ উদীয়মান প্রযুক্তির দ্বারা সৃষ্ট হুমকি প্রশমিত করার চেষ্টা করেন এবং তরুণদের সমালোচনামূলক কথোপকথনে অন্তর্ভুক্ত করে।
তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী এবং সেন্টার ফর এআই অ্যান্ড ডিজিটাল পলিসির গ্রীষ্মকালীন ফেলো।
সম্প্রতি তিনি টাইম ম্যাগাজিনের এআই বিষয়ে ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
আমাদের এআইয়ের সম্ভাবনার জায়গা নষ্ট হওয়ার আগেই ঝুঁকি মোকাবেলা করার সুযোগ রয়েছে। আমার কাছে এটিই দৃঢ়তা যেখানে আমরা অতীতের সীমা ছাড়িয়ে ভবিষ্যৎ কল্পনা করি।
স্নেহা রেভানুর
মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট (ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ)
টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউন-অনকোলজির মাধ্যমে, জর্জিনা লং এমন একটি বিশ্ব দেখতে চান যেখানে ক্যান্সারে মৃত্যু হবে না।
মেলানোমা ইনস্টিটিউট অস্ট্রেলিয়ার কো-ডিরেক্টর হিসেবে, লং ২০২৪ সালে খ্যাতি অর্জন করেন, যখন তিনি একটি বিশ্বে প্রথম একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্মিলিতভাবে ডিজাইন করেন।এই চিকিৎসা তার সহকর্মী এবং বন্ধু রিচার্ড স্কলিয়ারের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়, যিনি একটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ধরণের মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
লং এবং তার দল, যার মধ্যে রোগী নিজেও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তারা আবিষ্কার করেন যে ইমিউনোথেরাপি সবচেয়ে কার্যকর যখন টিউমার অপসারণের আগে ওষুধের একটি সংমিশ্রণ প্রয়োগ করা হয়।
তাদের অত্যাধুনিক কাজ, মেলানোমা নিয়ে বহু বছরের গবেষণা থেকে এসেছে, যা ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হাজারো রোগীর জীবন রক্ষা করেছে।
ভবিষ্যতের নেতারা সহমর্মিতা এবং মানবিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করবেন, মানুষকে পুরোনো সিস্টেম চ্যালেঞ্জ করতে এবং সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজতে ক্ষমতায়িত করবেন।
জর্জিনা লং
কম্পিউটার সাইন্টিস্ট
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) কল্যাণে দ্রুতবেগে পরিবর্তন হতে থাকা বিশ্বে প্রযুক্তি খাতের ক্রমবর্ধমান কার্বন ফুটপ্রিন্টের বিষয়টি অনেক সময় আড়ালে পড়ে যায়।
এআই বিজ্ঞানী সাশা লুকিওনি একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছেন যার সাহায্যে ডেভেলপাররা তাদের কার্বন নি:সরণের পরিমাণ পরিমাপ করতে পারবেন। এটি এরই মধ্যে ১৩ লক্ষবারের বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে।
ওপেন সোর্স এআই মডেল নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান 'হাগিন্স ফেস' এর জলবায়ু বিষয়ক প্রধান লুকিওনি।
এআই এর টেকসই প্রসারের উন্নয়ন নিশ্চিত করা লুকিওনির লক্ষ্য। তিনি একটি 'এনার্জি স্টার রেটিং সিস্টেম' তৈরি করার চেষ্টা করছেন যা জলবায়ুতে এআই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুেলোর প্রভাব পরিমাপ করবে।
জীববিজ্ঞানী
জীববিজ্ঞানী সিলভানা সান্তোস জেনেটিক্সে তার যুগান্তকারী আবিষ্কারের পুরো কৃতিত্ব ভাগ্যকে দেন। তিনি যেখানে থাকতেন সেখানকার রাস্তাতেই এমন একটি পরিবারের সাথে পরিচিত হন যাদের একটি অজানা রোগ ছিল।
তিনি এসপিওএএন সিনড্রোম (স্পাস্টিক প্যারাপ্লেজিয়া, অপটিক অ্যাট্রোফি এবং নিউরোপ্যাথি) নামক একটি বিরল জেনেটিক স্নায়ুবিকাশজনিত রোগ শনাক্ত করেন, যা উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলে ক্রমাগত প্যারালাইসিস সৃষ্টির কারণ।
২০ বছর আগে সেরিনহা দোস পিন্টোস শহরে গবেষণা শুরু করার পর থেকে, সান্তোস ওই এলাকার বাসিন্দাদের গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করেছেন।
তিনি বিরল জেনেটিক রোগগুলোর বিস্তার এবং এর সাথে ব্রাজিলের দরিদ্র গ্রামীণ সমাজে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহের সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা করেন।
আমরা কীভাবে দৃঢ়তার শক্তি প্রদর্শন করতে পারি? বুঝতে হবে যে জীবন একটি চক্র। তীব্র খরার সময় আমরা কেবল বেঁচে থাকি। বর্ষাকালে আমদের সমৃদ্ধি হয় এবং ফল ফলাই।
সিলভানা সান্তোস
মনোবিজ্ঞানী
মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সামিয়া। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তার আসল পরিচয় গোপন রেখেছে বিবিসি। সিরিয়ায় বছরের পর বছর সংঘাত থেকে সৃষ্ট মানসিক আঘাতের মুখোমুখি হওয়া মানুষদের সহায়তা করছেন তিনি।
দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে কয়েক লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি, যেমন হতাশা ও উদ্বেগ।
আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটির পরিচালিত একটি মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিকে কাজ করে, সামিয়া উত্তরের সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং তাদের পরিবারের জন্য কাউন্সেলিং সেশন পরিচালনা করেন।
অপ্রতুল সম্পদের পরেও, তিনি তার রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য নিবেদিত এবং সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ১০০ জন প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর নাম ঘোষণা করে বিবিসি। আমরা ডকুমেন্টারি, ফিচার, সংবাদ প্রতিবেদন এবং সাক্ষাৎকার তৈরি করি। নারীদের কেন্দ্রে রেখে গল্পগুলো তুলে ধরি যা বিবিসির সব প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।
বিবিসি ১০০ নারীকে ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে অনুসরণ করুন। #BBC100Women ব্যবহার করে আলোচনায় যোগ দিন।
বিবিসি ১০০ উইমেন টিম একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে, যা গবেষণার মাধ্যমে এবং বিবিসির ৪১টি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ল্যাংগুয়েজ টিম ও বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়।
আমরা এমন প্রার্থীদের খুঁজেছি যারা গত ১২ মাসে খবরের শিরোনামে এসেছেন বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রভাব রেখেছেন। পাশাপাশি যাদের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প রয়েছে বা যারা উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করেছেন এবং তাদের সমাজে এমনভাবে প্রভাব রেখেছেন যা হয়তো খবর হিসেবে আসেনি।
এ বছর Resilience বা 'দৃঢ়তা'র থিমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। রেজিলিয়েন্স বলতে মূলত সংকটের মুখে লড়াই করার সক্ষমতা এবং সহনশীলতাকে বুঝানো হয়। আমরা সারা বিশ্বজুড়ে নারীদের ওপর এই বছরের প্রভাবকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছি এবং এমন নারীদের নির্বাচন করেছি যারা তাদের দৃঢ়তার মাধ্যমে পরিবর্তন আনছেন এবং স্থানীয় বা বৈশ্বিক পর্যায়ে জীবনমান উন্নত করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাজ করছেন এমন নারীদের নামও যাচাই করা হয়েছে, যার মধ্যে জলবায়ু বিষয়ে অগ্রদূত এবং অন্যান্য পরিবেশগত নেতাদের একটি দল নির্বাচন করা হয়েছে।
আমরা সমাজের সব অংশ ও রাজনৈতিক মতামতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছি এবং এমন নামগুলো খুঁজেছি যেগুলো ভিন্ন ধারার মতামত তৈরি করে।
অঞ্চলভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে চূড়ান্ত নামগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। তালিকায় থাকা সব নারীর সম্মতি নেওয়া হয়েছে।
BBC 100 Women প্রোডাকশন টিম: ভ্যালেরিয়া পেরাসো, নাটালিয়া পিয়ানজোলা, মারিয়া জাকারো, রেবেকা থর্ন, লারা অওয়েন, নাটাশা ফেরান্দেস, নিয়াম হিউজ, আহমেন খাওয়া, শাইনা ওপেনহাইমার, সারা তিয়ামিউ এবং রুবাব বাতুল।
অতিরিক্ত প্রোডাকশন সহায়তা: বন্দনা বিজয়, কাতেরিনা খিনকুলোভা, মারিয়াম আমান, ভেরা কোয়াকোফি, মউনা বা, রূপা ঝা, জুলিয়েন এল-হাজ, মার্ক শিয়া, ক্রিস ক্লেটন, ইউনা কু, ইস্যারিয়া প্রৈথংগ্যাম, পাউলা আদামো আইডোয়েটা, লরা গার্সিয়া, আনা পেইস, ঝানা বেজপিয়াচুক, জ্লাতা ওনুফ্রিয়েভা, বেরজা সিমশেক, ফারহাত জাভেদ, আনাস্তাসিয়া সোরোকা, থাইস ক্যারানকা, সেলেস্টাইন কারনি, শাহনেওয়াজ রকি, খাইরুল্লা উবেইদুল্লায়েভ, আব্দিবেক কাজিভ, কাতেরিনা তসে, সিলভিয়া চাং, লরা বিকার, আয়ে থু সান, বুই থু, ডো হুং, ফারজাদ সেফিকারান।
বিবিসি ১০০ নারী সম্পাদক: গোলনূশ গোলশানি
নির্বাহী সম্পাদক: ক্লেয়ার উইলিয়ামস
কমিশনিং সম্পাদক: ফিওনা ক্র্যাক
ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ল্যাঙ্গুয়েজেসের জন্য প্রোডাকশন: রাফায়েল চাকোন, পিপ জॉय এবং ক্যারল অলোনা।
ডিজাইন: লিলি হুইন, প্রিনা শাহ, জেনি ল, ম্যাট থমাস, পলিন উইলসন এবং অলি পাওয়েল
ডেভেলপমেন্ট: স্কট জারভিস, অরুণ ভরি, আলেকজান্ডার ইভানোভ, ম্যাথিউ টেলর এবং প্রীতি ভাঘেলা।
ফটো কপিরাইট: গেটি ইমেজ, লরেন হারলি/নং ১০ ডাউনিং স্ট্রিট, ট্রেসি এমিন, ইয়োশিমোতো এন্টারটেইনমেন্ট, ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিং, স্টেফানি কিং, ডেরিক এভান্স, আস্টা ক্রিস্টিয়ানস, শাহনেওয়াজ রকি, আনেট হর্নিশ্চার, ফারহিও মোহামেদ হুসেইন, বিলসাত্যা, মোহানাদ এলহুসেইন, মাতারা স্টোকস, জো ও'শঘনেসি, তাপস মালিক, @কুচু টাইমস, মেলানোমা ইনস্টিটিউট অস্ট্রেলিয়া, ক্রিস্টোফার মিশেল, লেয়া, এম. সেভেন টর্ফিন, মুনডেলে বাদিমুবুঙ্গি আলাইন, ইউএসএ আর্কারি, দারিনা ল্যাভরেঙ্কো, কো উ, আলিক্স ম্যাকিনটশ, স্টিভ গেরার্ড, কেলি পোর্টিলো, ব্যাংকক প্রাইড, মারিয়ানা কাস্তিনেরাস, ডায়াসপোরা আর্টস কনেকশন, অ্যাক্সিয়ন ইন্টার্না, হুয়ান পাবলো ওরেলানা, জিন ফ্রান্সোইস কারলি ফর ক্যাথরিন হ্যামনেট/স্যামসাং গ্লোবাল সিরিজ, পেইজ সেঞ্জাল/হাইশিয়ান ব্রিজ অ্যালায়েন্স, গনজালো মারোকুইন, রাজ কুমার শ্রেষ্ঠা, রাভশান মুসায়েভ, এইচকে স্টুডিও, লিসা পালোমিনো, হ্যারল্ড লেভিন, মিডিয়া ওয়েলস, নেনসি রাগাব, আলেকজান্ড্রে নুনিস, ম্যানন অবেল/ক্ল্যান্ডেস্টিনা, হিলা শিলোনি/উইমেন অব দ্য ওয়াল, ফেলিক্স স্পেলার/ডিজাইন মিউজিয়াম, কাজিম কিজিল, হুগো ম্যাথি, দিমিত্রি আইচুভাকভ, উলা ওসমান, নেভার স্পোর্টস, নাসা, পিটার গিওডানো, ইয়েরো আদুগনা, জুমাদিল টোক্কোজেভ, মার্কো কন্টি সিকিক, ফ্রান্সোয়া ব্যারেয়, সোশ্যাল ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট, মেম্বলি স্টুডিও, গ্রেগ সি. হোল্যান্ড, বেন কোহেন, হাগার বাদের/লাবা ইমপ্যাক্ট হাউস, কেইকো আতসুটা, ডোয়ান ডুক থাং, মনোমি সেকি, প্রার্থক্য।